কাগজপত্রের জটিলতা এবং পদ্ধতিগত সমস্যার কারণে করদাতারা আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
Published : 08 Feb 2022, 05:22 PM
এ সমস্যার সমাধানে অনলাইনে আয়কর বিবরণী (রিটার্ন) জমা দেওয়াকে আরও জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনি কর-রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে অনলাইন রিটার্ন জমা দেওয়া জনপ্রিয় করবো। আমরা দেখছি রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে চলমান সিস্টেম একটা অন্তরায়। একজন টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিতে গেলে যে পরিমাণ কাগজপত্র হিসাব-নিকাশ জমা দিতে হয় তা সবার পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
“বাধ্য হয়ে তারা একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেন। দেখা গেছে যত টাকার রিটার্ন জমা দিতে যাচ্ছেন, আইনজীবীকেও ঠিক তত টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে পারিশ্রমিক হিসেবে। সব মিলিয়ে মধ্যম সারির করদাতারা রিটার্ন জমা দিতে আগ্রহ পান না।“
এসব কারণেই রিটার্ন জমা কম পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, টিআইএনধারী ৭০ লাখ হলেও রিটার্ন জমা দিচ্ছেন ২৪ থেকে ২৫ লাখ মানুষ।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “বর্তমান জনশক্তি দিয়ে সব ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি। করজাল বাড়ানো, করহার কমানোর লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।
শুধু এনবিআরের পক্ষে সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার মতো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে রহমাতুল মুনিম বলেন, গত বাজেটে আমরা শহরের বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল চালুর জন্য বিশেষ সুযোগ রেখেছিলাম। কিন্তু শিক্ষা কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ না নিলে কেবল করছাড়ের জন্য যে রাতারাতি একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে না এ দুটি খাত অগ্রসর না হওয়া তার প্রমাণ।
“আমরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য একটা সুযোগ নিয়ে আসলাম। কিন্তু তাদেরকে কাজের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সমাজ সেবা অধিপ্তরের উদ্যোগ না নিলে তা বাস্তবায়ন হবে না বা হচ্ছে না, যোগ করেন তিনি।
বৈঠকে ইআরএফের প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। কিন্তু আয়কর দেন মাত্র ১৪ থেকে ১৫ হাজার বিদেশি। দেশে কর্মরত বিদেশীরা বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে টিআইবি। এমন প্রেক্ষাপটে বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনতে এনবিআারের উদ্যোগ আরও জোরালো করার পরামর্শ দেওয়া হয় প্রস্তাবে।
এবিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসে কেউ কাজ করলে সেই দায়ভার শুধু এনবিআরের নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিডা যদি উদ্যোগ নেয় তবে কিছুটা হলেও সম্ভব হতে পারে।
“এছাড়া সংশ্লিষ্ট খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও এবিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। কারণ, যারা অনুমতি ছাড়া বিদেশি নাগরিকদের চাকরি দিচ্ছে আর যারা বৈধভাবে চাকরি দিচ্ছে তাদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা হতে পারে। এই অসম প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা পেতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।“
গত বছর থেকে বাস্তবায়ন শুরু হওয়া ভ্যাট আইনে বেশ কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সেগুলো ধীরে ধীরে চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করার কথা জানান।
খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে লোকবল কম থাকাটাই প্রধান অন্তরায় বলে জানান তিনি।
ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামসহ সংগঠনের কয়েকজন প্রতিনিধি তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন।
ইআরএফের প্রস্তাব
টিআইএনধারীদের রিটার্ন দাখিল করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো, দেশে করযোগ্য প্রকৃত নাগরিকের সংখ্যা নিরুপণে এনবিআরের ব্যাপকভিত্তিক জরিপ চালানো, উৎসে কর না কেটে বিকল্প পদ্ধতিতে কর আহরণ করা যায় কি না তা ভেবে দেখা, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় করা, বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কর কাঠামো তৈরি, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ অটোমেশন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা, রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্য সম্ভাবনাময় খাতকেও তৈরি পোশাকের মতো নিয়মিত বন্ডেড সুবিধা দেওয়া, প্রতিটি পণ্যের জন্য আলাদা এইচএইচ কোড নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় ইআরএফ।
প্রস্তাবে খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনার পাশাপাশি তাদের ভ্যাট পণ্যমূল্যের ওপর নির্ধারণ না করে সংযোজিত মূল্যের ওপর নির্ধারণ করা দরকার বলে উল্লেখ করা হয়। কেননা খুচরা ব্যবসায়ীরা ভ্যাট রিফান্ড পান না।
একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সাধারণ কারখানা ও পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে করপোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে ৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করা হয়। এখন পরিবেশবান্ধব কারখানার জন্য যে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করতে হয় সে তুলনায় বিদ্যমান ২ শতাংশ কর সুবিধা অপ্রতুল।