সুতা আমদানি: তাঁতিদের অভিযোগ তাঁত বোর্ডের বিরুদ্ধেই

একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাঁত শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং রাষ্ট্রীয় তাঁত বোর্ডের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2021, 03:55 PM
Updated : 5 Sept 2021, 03:55 PM

রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতির নেতারা।

সমিতির সভাপতি মনোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে শাড়ি লুঙ্গির উৎপাদন ধরে রাখার জন্য পাঁচ বছর আগেই শুল্কমুক্ত সুতা আমদানি সুবিধা সংক্রান্ত এসআরও জারির নির্দেশনা দিয়েছেন।

তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আলম

“সেই এসআরও জারি হলেও গত দুই বছর ধরে রহস্যজনক কারণে তা স্থগিত করে রেখেছে স্বয়ং তাঁত বোর্ড।“

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে লংঘন করে স্পিনিং মিল মালিকদের সঙ্গে তাঁত বোর্ডের যোগসাজশের অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আলম ও বোর্ডের একটি শক্তিশালী চক্র দুই বছর ধরে পলিয়েস্টার সুতা, রঙ ও রাসায়নিক আমদানি বন্ধ করে রেখেছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজেই এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।”

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, একদিকে মহামারী, অন্যদিকে সুতা সংকট এবং মানব সৃষ্ট সঙ্কটে পড়ে তাঁত শিল্প আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে। দেশের ৬০ ভাগ তাঁত ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময় এখানে ৮০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা থাকলেও এখন ৪০ লাখ মানুষ এই শিল্প থেকে ছিটকে পড়েছে।

“পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধের ফলে প্রতি পাউন্ড ৭৫ টাকার সুতা এখন ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে এবং তাঁতিরা তাঁত বন্ধ করে দিচ্ছে।”

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, তাঁত শিল্পে ব্যবহারের জন্য নিবন্ধিত তাঁতিরা ১০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি করতে পারতেন। এখন তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে খোলা বাজারে সাধারণ আমদানিকারকদের আমদানি করা সুতার জন্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এতে বাজার থেকে সুতা কিনতে গিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে তাঁতিদের।

চীন, ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে পলিয়েস্টার সুতা এনে শাড়ি, লুঙ্গি, জামদানি কাপড়সহ নানা ধরনের কাপড় তৈরি করেন দেশি তাঁতিরা।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রোববার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতির নেতারা।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগেই সমিতির নেতাদের অনিয়মের কারণে স্বল্প শুল্কে (৫ শতাংশ) আমদানির সুযোগ বন্ধ করা হয়েছিল। সংসদীয় কমিটির সুপারিশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এখন তাদেরকে সেই সুযোগ আবার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

“আমরা প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছি। অচিরেই সেটা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। স্বল্প শুল্কে আমদানি করা সুতা সাধারণ তাঁতিদের না দিয়ে তারা বিক্রি করে খোলা বাজারে। এটি যাতে বন্ধ করা যায় সেজন্য বেশ কিছু সুপারিশ প্রস্তত করা হয়েছে।”

এই কাজ করতে দুই বছর সময় লাগার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যোগদানের পরেই মহামারীর কারণে সবকিছু স্থবির ছিল। তাই কাজ এগোনো যায়নি।

তাঁতি সমিতির সভাপতি নিজেও সুতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জানিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, “আগের তদন্ত প্রতিবেদনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া সভাপতি মনোয়ার হোসেনের নামও রয়েছে। এখন নতুন করে এই সুবিধা চালু করা হলে সাধারণ তাঁতিরা যাতে পায় সেই ব্যবস্থাই করা হবে।

“এখানে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে এরা কেউ তাঁতি নয়। গত দুই বছর ধরে এরা এডহক কমিটি দিয়ে চলছে। তাদের তাঁত নেই, সুতা আমদানি করে বিক্রি করাই এদের মূল লক্ষ্য,” বলেন তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান।