৪২ বিলিয়ন ডলারের নতুন উচ্চতায় রিজার্ভ

মহামারীর মধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2020, 11:42 AM
Updated : 15 Dec 2020, 01:25 PM

মঙ্গলবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ অবস্থান করছিল ৪২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলারে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর ভর করেই রিজার্ভ নতুন এ উচ্চতায় উঠেছে। এছাড়া রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা এবং বিদেশি ঋণ-সহায়তা বৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত এক বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানিতে ধীরগতি ও বিদেশি ঋণ বৃদ্ধির কারণে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক জায়েদ বখত।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এই গবেষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকারকে সাহস জোগাচ্ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। গত ২৯ অক্টোবর তা প্রথমবারের মত ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

৫ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৭ নভেম্বর তা ফের ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে প্রায় সাড়ে দশ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

গত কয়েক বছর ধরেই রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দশ বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জুন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে সেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গত বছরের অক্টোবরে। চলতি বছরের ৩০ জুন সেই রিজার্ভ বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। অক্টোবরের ৮ তারিখে ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী, ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রিজার্ভ এখন বাংলাদেশের।

এ প্রসঙ্গে ছাইদুর রহমান বলেন, “১৬ ডিসেম্বরের আগের দিন রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বিজয়ের এই মাসে পাকিস্তানের দ্বিগুণ রিজার্ভ এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ৪৯ বছরে অনেক এগিয়েছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রবাসীরা ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি।

এর আগে এক বছরে বাংলাদেশে এত রেমিটেন্স আর কখনো আসেনি। ২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ১৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের ১ শতাংশ বেশি।

অর্থবছরের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) বিদেশি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই চার মাসে ১৬৫ কোটি ১০ ডলার বিদেশি ঋণ এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে এই চার মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ১৩ শতাংশ।

আরও পড়ুন