রিজার্ভ ফের ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ফের ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2020, 07:29 PM
Updated : 26 Nov 2020, 07:29 PM

বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক এই উচ্চতায় উঠেনি।

গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতায় চলতি নভেম্বর মাসেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের ২৫ দিনেই ২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ২৫ নভেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

মহামারীর এই কঠিন সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফনের কারণেই তিন সপ্তাহের ব্যবধানেই রিজার্ভ ফের ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারও ছাড়াবে বলে আশা করছেন তিনি।

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে একের পর এক রেকর্ড গড়ে গত ২৯ অক্টোবর অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

৪ নভেম্বর বুধবার রিজার্ভ ছিল ৪১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। ৫ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তা ফের ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে নতুন উচ্চতায় উঠেছে।

এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে দশ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

রিজার্ভের এই সুখবরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রবাসী কর্মীদের, যারা মহামারীর সঙ্কটেও প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠিয়ে চলেছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই কঠিন সময়ে বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় আমি আবারও প্রবাসী ভাই-বোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দশ বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জুন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে সেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গত বছরের অক্টোবরে। চলতি বছরের ৩০ জুন সেই রিজার্ভ বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উঠে। তারপর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর তা

৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। অক্টোবরের ৮ তারিখে ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে। তার আগেই রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৮৮২ কোটি ৫৬ লাখ ( ৮.৮২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।

আর চলতি নভেম্বর মাসের ২৫ দিনে অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

সবমিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে।

এর আগে এই মহামারীর মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) গড়ে সোয়া ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিটেন্স এসেছে।

চলতি অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

এই চার মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এক হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ (১২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের প্রায় ১ শতাংশ বেশি।

তবে সর্বশেষ অক্টোবর মাসে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৪ শতাংশ আয় কম হয়েছে।

অর্থবছরের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদেশি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই তিন মাসে ১৩৮ কোটি ৫০ ডলার এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে এই তিন মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।