রোববার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘এলডিসি পরবর্তী বাংলাদেশের যাত্রা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এই সতর্কবার্তা দেন তিনি।
ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এক সময় বিশ্বমানের ছিল। কিন্তু পরিচালনা বোর্ডে পরিবারিক হস্তক্ষেপ এবং ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কারণে এ খাতটি এখন বিশ্বমান থেকে সরে গেছে।
“খেলাপি ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গবেষণার মাধ্যমে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করলে ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না,” বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চার মাস আগে দায়িত্ব নেওয়ার পরই খেলাপি ঋণ কমিয়ে ফেলার ঘোষণা দেন।
এরপর প্রথমে ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) নীতিমালা শিথিল করা হয়। তাতে ব্যাংকগুলো এখন মাত্র তিন বছরের মন্দ মানের খেলাপি ঋণ ব্যালেন্স শিট থেকে বাদ দিতে পারবে। এতদিন কোনো ঋণ মন্দ মানে শ্রেণিকৃত হওয়ার পাঁচ বছর পার না হলে তা অবলোপন করা যেত না।
যারা ঋণ শোধ করতে না পারার ‘যৌক্তিক’ কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন, তাদেরকে মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৭ শতাংশ সুদে ১২ বছরে ওই টাকা পরিশোধের সুযোগও দেওয়া হয়েছে।
খেলাপি ঋণের বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন।
ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন আনতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেন তিনি।
ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “দেশে যে কোনোভাবে একদলীয় শাসন প্রাধান্য পেয়েছে। এরমধ্যেও জবাবদিহিতার কাঠামো রাখতে হবে। শুধু একজনের কাছে জবাবদিহিতা নয়।”
নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণমাধ্যম স্বাধীন না হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ততটা শক্তিশালী হয় না।”
ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “দেশে এখন অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এমনকি বিদেশি ঋণের যত্রতত্র প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এতে ঋণের দায় বাড়ছে।”
প্রকল্প গ্রহণের আগে অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে, না কি বুড়িগঙ্গায় টানেল গুরুত্ব পাবে, সে বিষয়ে গবেষণা থাকতে হবে।”
ঢাকার একটি হোটেলে বিআইডিএস মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
ব্যাংক খাত নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ‘চিন্তা’ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সংস্কারের পর এ খাতের উন্নয়ন হবে।”
এপ্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “কিন্তু সরকার চাইলেও রাজনৈতিক অর্থনীতির কারণে তা করা কঠিন।”