রাজনৈতিক প্রভাবে খেলাপি ঋণে সংকটে পড়ছে ব্যাংক খাত, আর টাকাওয়ালাদের কৌশলে মার খাচ্ছে ভোক্তা ও কৃষক, অবিচার হচ্ছে তৈরি পোশাককর্মীদের উপর- বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থা নিয়ে এভাবে অসন্তোষ জানিয়েছেন অর্থনীতির অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
Published : 21 Dec 2017, 08:48 PM
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান বলেন, “ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যথা সময়ে পরিশোধ না করে পুনঃতফসিল করা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। এভাবে পুনঃতফসিল করতে করতে এক সময় ওই গ্রহীতা খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
“পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থ হওয়াও এখন বড় অভ্যাস হিসেবে দেখা দিয়েছে।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতে রাজনীতিকীকরণের কারণেই তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশের পুজিঁবাজারে এখন অনুমানভিত্তক লেনদেন হচ্ছে মন্তব্য করে রেহমান সোবহান বলেন, শুধু দেশের নয়, সারা বিশ্বের পুঁজিবাজারই জুয়ার টেবিলে পরিণত হয়েছে।
“সারা বিশ্বেই ক্যাপিটাল মার্কেট এখন বড় ধরনের একেকটি ক্যাসিনোর মতো হয়ে গেছে।”
বাজারে কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে-পর্যবেক্ষণ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “এখন বাজার ব্যবস্থায় অনৈতিক কার্যক্রম চালু থাকায় বাজার একচেটিয়া করে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
“এক্ষেত্রে কৃষককে ঠকিয়ে নগদ টাকার শক্তিতে টাকাওয়ালারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। যেমন, গ্রামের একজন কৃষকের টমেটোর বাম্পার ফলনের সুফল তুলে নিচ্ছে শহরের টাকাওয়ালারা।”
“এটা খুবই অনৈতিক। এ খাতটি উন্নত বিশ্বের যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে তারা উন্নত বিশ্বের সুবিধা ভোগ করলেও এ খাতে আমাদের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক তৃতীয় বিশ্বের শ্রমিকের বেতন পাচ্ছে। জীবনযাপনও তাই করছে।”
শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃষ্ট বৈষম্যকে দেশের আরেকটি মৌলিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক।
তার মতে, “আমাদের সাধারণ ঘরের শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে না। বেশি টিউশন ফি দিয়ে যারা বেসরকারি স্কুলে পড়াতে পারছে তারাই এখন মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে।”
একইভাবে ব্যবস্থায় গলদের কারণে দেশের সাধারণ ও গরিব মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না বলেও মনে করেন তিনি।
দেশের কৃষি ও খাস জমি বণ্টনে অন্যায্যতার কথা তুলে ধরে চরম দরিদ্রদের মধ্যে খাস জমি বণ্টন করার পরামর্শ দেন রেহমান সোবহান।
দেশের সব সম্পদ বণ্টন ন্যায়ভিত্তিক করা জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকারের সকল ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের অবাধ সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে হবে।”
বাংলাদেশে বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্য টেকসই উন্নয়নের অন্তরায় বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, “বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নয়নের দেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে মাত্র নয় বছর আগের দারিদ্র্য হার ৪০ শতাংশ থেকে এখন ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে।”
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়।