বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও পুষ্টিহীনতার কারণে প্রতিবছর প্রায় আট হাজার কোটি টাকার উৎপাদন হারাচ্ছে বলে এ সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
Published : 26 Oct 2016, 08:00 PM
এছাড়া স্বাস্থ্য খাতেও পুষ্টিহীনতার মূল্য দিতে হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) তৈরি ‘বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বিষয়ে কৌশলগত পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
বুধবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রতিবেদনটির মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নর্দান আয়ারল্যান্ডের আলস্টার ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার চিফ অব স্টাফ জেমস হার্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, “বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ লোক ২০১৪ সালেও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ছিল, যার সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ প্রচণ্ডভাবে খাদ্যাভাবে ছিল।”
এমনকি বিশাল সংখ্যক জনগণ তাদের বেকার সময়ে এখনও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
এতে আরও বলা হয়, গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করলেও এখনও কিছু জায়গায় সমস্যা রয়ে গেছে। বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা এখনও খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধামুক্ত হতে পারে নি। বিশেষ করে যেসব পরিবারে খাদ্য সংকট রয়েছে সেসব পরিবারে নারীরাই বেশি খাদ্য সংকটের শিকার হচ্ছে।
“এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও তাতে ধনীদের তুলনায় গরীবদের মধ্যে তা একেবারেই নগন্য।”
এই পুষ্টিহীনতার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে বাল্য বিবাহকে দায়ী করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিবাহের ফলে তাদের ঘরে যে সন্তান জন্ম নেয় সে অপুষ্টিতে ভোগে। বাল্য বিবাহিত বাবা-মা সাধারণত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে না। ফলে এর প্রভাব পড়ে তাদের সন্তানের ওপর। আর ওই সন্তান তা সারা জীবন ধরে ভোগ করে।
এভাবে দেশ একটি পুষ্টিকর জাতি থেকে বঞ্চিত হয় বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
অনুষ্ঠানের বক্তব্যে বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের দেওয়া সমাজ-সম্প্রদায় ও অঞ্চল ভিত্তিক উৎসাহে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
“পরবর্তীতে এর বিরেুদ্ধে একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠে। কম বয়সে বিয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠে। সেটা বেশ ভালো ভালো ফলাফল নিয়ে আসে।”
এর পরের পর্যায়ে আঠার বছরের আগে বিয়ে নিষিদ্ধ করার আইন করার প্রসঙ্গে তুলে ধরে মুহিত বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন উল্টো লেট ম্যারিজ বেশি দেখা যাচ্ছে।”
এক পর্যায়ে পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া শুরু করা হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এখনও আমরা পুষ্টির যোগান দিতে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। বাচ্চাদের জন্য এক হাজার দিন পর পর্যন্ত পুষ্টি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
পুষ্টির সরবরাহে বাজেটে অতীতের মতো বর্তমানেও কিছু সুবিধা রাখা হলেও সেগুলো বন্টনের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সে দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের পুষ্টি পূরণের দিকে খেয়াল রাখা উচিত।”
পুষ্টির বৈষম্য দিন দিন বাড়ার পেছনে বন্টন ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করেন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের আলস্টার ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ওসমানীও।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রশংসা করে করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত যে দেশটাকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলা হতো সে দেশটিই এখন উন্নয়নের বিস্ময়।
“এটি আসলে সম্ভব হয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ফলে। খাদ্য উৎপাদনে এতো সফলতার পরেও সার্বিকভাবে আমরা এখনো পুষ্টিতে পিছিয়ে আছি।”
পুষ্টির বৈষম্য কমিয়ে এনে পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক সিদ্দিকুর।
তিনি বলেন, “আগামী ২০৩০ এর মধ্যে সরকার ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে টার্গেট নিয়েছে তাতে প্রধান চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে আমাদের উপকুলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। কার্বন-ডাই অক্সাইড কমছে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের শহর এলাকায় এসে বস্তিতে বাস করার ঘটনাকেও পুষ্টি বৈষম্য দূরীকরণে বড় একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা. শাহ কামাল।