রিজার্ভ চুরির ‘হোতারা’ চীনা?

ভুয়া নির্দেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন অর্থ ফিলিপিন্সে গেলেও ব্যাংকিং খাতের অন্যতম বড় এই চুরির পেছনে চীনা হ্যাকারদের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ঘটনা তদন্তে কাজ করা দেশটির এক সিনেটর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2016, 06:56 PM
Updated : 5 April 2016, 07:15 PM

আর যে রিজল ব্যাংকের মাধ্যমে ফিলিপিন্সে ওই অর্থ ঢোকে সেই ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক বলছেন, আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সিস্টেম ও ধনকুবেরদের বড় বাজির দাবা খেলায় তিনি একটি ‘গুটি’ মাত্র।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে চারটি ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই অর্থ ফিলিপিন্সের রিজল কর্মাশিয়াল ব্যাংকে পাঠানো হয়। এছাড়া আরেকটি নির্দেশনায় শ্রীলংকায় পাঠানো হয় আরও ২০ মিলিয়ন ডলার।

এই পাঁচটিসহ সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে পাঠানো আরও ৩০টি নির্দেশনায় মোট ৯৫১ মিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা করেছিল জালিয়াত চক্রটি। তবে জালিয়াতি টের পেয়ে ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ছাড়া বাকি অর্থ আটকে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকটি।

ফিলিপিন্সে সিনেট কমিটির মঙ্গলবারে শুনানিতে রিজল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগিতো

আর ওই ৮১ মিলিয়ন রিজল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ফিলিপিন্সের মুদ্রা ব্যবস্থায় মিশে যায় বলে স্থানীয় পত্রিকাগুলি খবর প্রকাশ করে।

ওই চারটিসহ ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ মোট পাঁচটি অ্যাকাউন্ট খোলায় সহযোগিতার জন্য ইতোমধ্যে রিজল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগিতোর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। তাকে ছাঁটাই করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষও।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার ফিলিপিন্স সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির শুনানিতে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সিস্টেম ও ধনকুবেরদের বড় বাজির দাবা খেলায় ‘গুটি’ হয়েছেন বলে মন্তব্য করে বলেন, “যদি এই কমিটি দাবার গ্র্যান্ডমাস্টারের খোঁজে থাকে, তাহলে সেটা আমি নই।”

মঙ্গলবারের শুনানির বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, দেগিতো ফিলিপিন্সে ওই চুরির অর্থ ঢোকানোর পেছনে অনেক দেশের প্রভাব এবং ক্ষমতাধর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাংকটির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশের ইঙ্গিত করেছেন।

এর আগের এক শুনানিতে রিজল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও আইনজীবী দেগিতোর দিকে আঙ্গুল তুলেছিলেন এই বলে, এত এত মিলিয়ন ডলার ট্রানজেকশনে শাখা ব্যবস্থাপক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগে থেকে জানানো ছাড়াই একা বিষয়টি দেখভাল করেছেন।

ফিলিপিন্সে সিনেট কমিটির মঙ্গলবারে শুনানিতে ম্যানিলায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেস (মাঝে)

আর সার্বিকভাবে রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি কোনো ফিলিপিনো নয় বরং চীনা হ্যাকারদের কাজ হতে পারে বলে শুনানিতে ধারণার কথা বলেন ব্লু রিবন কমিটির সদস্য সিনেটর রালফ রেক্তো।

“এটা মনে হচ্ছে তারা ফিলিপিনো হ্যাকার নয়- সম্ভবত চীনা হ্যাকার।”

আর ‘ফিলিপিন্সের ব্যাংকিং সিস্টেম বা অন্তত একটি ব্যাংকের দুর্বলতা’ দেখেই হ্যাকাররা জালিয়াতির অর্থ পাচারের জন্য ফিলিপিন্সকে বেছে নেয় বলেও মন্তব্য করেন দেশটির এই সিনেটর।

তবে রিজার্ভ চুরির পেছনে চীনা হ্যাকারদের হাত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য বা কেন তিনি চীনা হ্যাকারদেরই সন্দেহ করছেন সে বিষয়ে শুনানিতে কিছু বলেননি রেক্তো।

সিনেট তদন্তে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন ক্যাসিনোর চীনা বংশোদ্ভূত অপারেটর কাম সিং অং ওরফে কিম অং, যিনি রিজল ব্যাংকে ওই চার অ্যাকাউন্ট খোলায় দেগিতোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে তাকেই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অন্যতম হোতা বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।

তবে গত সপ্তাহে সিনেট শুনানিতে হাজির হয়ে বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজে নামে দুই চীনা জাংকেট অ্যাজেন্টের নাম বলে তারাই ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সে ঢোকায় বলে দাবি করেন অং।

শুহুয়া গাওয়ের কাছে জুয়ায় ধার দেওয়া ফিলিপিনো মুদ্রায় ৪৫০ মিলিয়ন পেসো বা প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার পেতেন দাবি করে শুনানিতে তিনি বলেন, ধার উসুল হিসেবেই ওই এক কোটি ডলার পরিশোধে গাও তাকে রিজল ব্যাংকের ওই শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছিলেন।

গাও ‘ধার উসুল’ হিসেবে তাকে চুরি যাওয়া অর্থ থেকে এক কোটি ডলার দেন দাবি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন অং। ওই অর্থসহ নিজের জুয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে আরও প্রায় ৫৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশের সপ্তাহ না পেরোতেই ৫৫ লাখ ডলার ফেরত দেন তিনি।

বাকি ১০ মিলিয়ন ডলার ফেরতে মঙ্গলবারের শুনানিতে আরও ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় চান ফিলিপিন্সে বসবাস করা এই চীনা ব্যবসায়ী।