বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরিতে দুই চীনার নাম

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দুই চীনা ব্যবসায়ীর নাম বলেছেন ফিলিপিনো ব্যবসায়ী কাম সিন অং ওরফে কিম অং, যাকে এই চুরির অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছিল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2016, 09:49 AM
Updated : 29 March 2016, 10:13 AM

এ ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার দেশটির সিনেট কমিটির শুনানিতে চীনা বংশোদ্ভূত এই ব্যবসায়ী বলেন, “৮১ মিলিয়ন ডলার এদেশে এনেছে দুই বিদেশি।”

বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজের নাম বলেছেন তিনি।

সিনেট কমিটির সামনে আসার আগে স্থানীয় গণমাধ্যমের সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন কিম অং।

রিবন কমিটির শুনানিতে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস-দেগিতোর দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরেই এ জালিয়াতিতে কিম অংয়ের নাম আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ওই ব্যাংকেরই চারটি অ্যাকাউন্টে জমা হয়। তবে সিনেট কমিটির শুনানিতে ওই চার অ্যাকাউন্টের মালিককে তলবের জন্য নাম-ঠিকানা খুঁজলে দেখা যায় সেগুলো ভুয়া।

ব্লু রিবন কমিটির সদস্য সিনেটর সের্গিও ওসমেনাকে উদ্ধৃত করে ইনকোয়ারার এর আগে জানিয়েছিল, কিম অংই ওই ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো খুলতে বলেছিলেন দেগিতোকে। ফিলরেম নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ডলার ভাঙানোর নির্দেশও তিনিই দিয়েছিলেন।

১৫ বছর আগেও কিম অং একবার সিনেট ব্লু রিবন কমিটির শুনানির মুখোমুখি হন বলে ফিলিপিন্সভিত্তিক এবিএস-সিবিএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অবৈধ মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সে সময় ৩৯ বছর বয়সী অংকে ডাকা হয়েছিল। এক সিনেটরের সঙ্গে মাদক চোরাচালানিদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে ।

বিএস-সিবিএনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর বয়সে চীন থেকে ফিলিপিন্সে আসেন অং। কলেজের ছাত্র থাকাকালে লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্থানীয় একটি সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির কাজে যোগ দেন।

পরে নিজেই একজন ব্যবসায়ী বনে যান এবং পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।

কিম অংয়ের সঙ্গে মায়া সান্তোস-দেগিতোকেও মঙ্গলবারের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। তবে স্বাস্থগত কারণ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি হাজিরা এড়িয়ে গেছেন বলে ইনকোয়ারার জানিয়েছে।   

দেগিতোর খোলা সেইসব অ্যাকাউন্ট থেকে রিজার্ভ চুরির টাকা তুলে ফিলিপিন্সে ক্যাসিনো ‘জাঙ্কেট অপারেটর’ ওয়েইকাংক হু’র অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা হয়।

ফিলিপিন্সে ক্যাসিনোগুলোতে আর্থিক লেনদেনের ওপর নজরদারির দায়িত্বে থাকা সংস্থা প্যাগকর আগেই জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪৬ মিলিয়ন স্থানীয় মুদ্রা পেসোয় রূপান্তর হওয়ার পর ক্যাগায়ান প্রদেশের সোলায়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো এবং ইস্টার হাওয়াই ক্যাসিনো অ্যান্ড রিসোর্টের মাধ্যমে দেশের অর্থব্যবস্থায় মিশে গেছে।

এর মধ্যে সোলায়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোতে ‘জাঙ্কেট অপারেটর’ ওয়েইকাংক হু মাধ্যমে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার হাতবদল হয় বলে সিনেট কমিটির শুনানিতে উঠে এসেছে।

রিজার্ভ পাচারের অভিযোগে ওয়েইকাংক হু এবং কিম অংয়ের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলাও করেছে ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার কাউন্সিল-এএমএলসি।