রিজার্ভ চুরি: কোটি ডলার ‘ফেরত দিতে আগ্রহী’ কিম অং

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দুই চীনা ব্যবসায়ীর নাম বলেছেন ফিলিপিনো ব্যবসায়ী কাম সিন অং ওরফে কিম অং; প্রায় এক কোটি ডলার তিনি ফেরত দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে দেশটির একটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2016, 11:30 AM
Updated : 29 March 2016, 02:12 PM

চীনা বংশোদ্ভূত কিম অংকে এই চুরির অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছিল। মঙ্গলবার সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির শুনানিতে তিনি বলেন, “৮১ মিলিয়ন ডলার এদেশে এনেছে দুই বিদেশি।”

বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজের নাম বলেছেন তিনি।

অংয়ের ভাষ্যমতে, গাও প্রায়ই ফিলিপিন্সে যাওয়া-আসা করেন এবং গত আট বছর ধরে জুয়ার মক্কেল (জাঙ্কেট এজেন্ট) এনে দেন। এই মহলে পরিচিতি রয়েছে তার। ম্যাকাওয়ের ব্যবসায়ী ডিংকেও তিনিই তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

তাদের পাসপোর্টের অনুলিপিও সিনেট কমিটিতে দিয়েছেন তিনি।

অং বলেন, গাও একবার সোলায়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোতে এক সপ্তাহের মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন ফিলিপিনো পেসো (প্রায় এক কোটি  ডলার) হেরে ওই অর্থ তার কাছ থেকে ধার করেছিলেন।

জাঙ্কেট অপারেটর হিসেবে জুয়াড়িদের গ্যারান্টার ও তাদের থাকা, ভ্রমণসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করেন কিম অং।

বাংলাদেশ থেকে চুরি হওয়া টাকার মধ্যে ১ বিলিয়ন পেসো তার কোম্পানি ইস্টার হাওয়াই লেইজার কোম্পানি লিমিটেডে গিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন পেসো ধার পরিশোধ হিসেবে দিয়েছিলেন গাও। বাকি ৫৫০ মিলিয়ন চিপস-এ রূপান্তর করে তার ক্যাসিনোয় খেলা হয়েছিল এবং পুরো টাকাটা হেরে গিয়েছিল।

ধারের অর্থ হিসেবে যে ৪৫০ মিলিয়ন পেসো পেয়েছিলেন সেটা এখন অং ফেরত দিতে রাজি বলে শুনানিতে তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে জিএমএ নিউজ অনলাইন জানিয়েছে।

ঘটনার বিবরণে কিম অং বলেন, গাও তার কাছ থেকে যখন অর্থ ধার করেছিলেন সে সময় রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস-দেগিতো তাকে ওই শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলার অনুরোধ করেন। তখন গাওকে তার কাছে পাঠান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসির এই শাখা দিয়েই ফিলিপিন্সে ঢুকেছিল।

অং বলেন, ২০১৫ সালের মে মাসের কোনো এক সময় মিডাস হোটেলে তার অফিসে গাও ও তার সঙ্গে দেগিতোর সাক্ষাৎ হয়।

সে সময় গাও একটি ডলার অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইছিলেন। তবে দেগিতো তখন  বলেন কোনো একটি কোম্পানির অ্যাকাউন্টের জন্য তাদের পাঁচজনের অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে । এর দুই থেকে তিনদিনের মাথায় পাঁচটি ডলার অ্যাকাউন্টের জন্য দেগিতো তাকে ফোন করে আড়াই হাজার ডলার চান।

এরপর গত ৪ ফেব্রুয়ারি গাও তাকে বলেন যে, তিনি ও ডিং ম্যাকাওয়ে তাদের ক্যাসিনো বন্ধ করে ম্যানিলায় বিনিয়োগ করতে চাইছেন।

পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি সোলায়ার হোটেলে গাও ও ডিং এর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এবং তারা দুজন তাকে বলেন দেগিতোকে ফোন করে ওই পাঁচ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘চেক’ করতে বলেন।

কিম অং

অং বলেন, কয়েক দফা ফোন করার পর দেগিতো বেলা ১টার দিকে ফোন করে তাদের জানান মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার তাদের অ্যাকাউন্টে আসতে শুরু করেছে।

এ সময় দেগিতোকে ওই হোটেলে টাকা নিয়ে আসতে অনুরোধ করেন তিনি।

দেগিতোর অনুরোধে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের  মিকাইল বাউতিস্তা  ৮০ মিলিয়ন পেসো নিয়ে  আসেন। পরে দেগিতো আরও ২০ মিলিয়ন পেসো নিয়ে আসেন।

এরপরেও বাউতিস্তার বাড়ি থেকে তিনি ৩০০ মিলিয়ন পেসো এবং ৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেন বলে অং জানান।

এরমধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি ১০০ মিলিয়ন পেসো ও তিন মিলিয়ন ডলার, ১০ ফেব্রুয়ারি ১০০ মিলিয়ন পেসো ও দুই মিলিয়ন ডলার এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি বাকি ১০০ মিলিয়ন পেসো সংগ্রহ করেন বলে জানান তিনি।

এই অর্থ লেনদেনে ব্যবহৃত পাঁচটি অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে কাগজপত্র জালিয়াতির জন্য দেগিতোকে দায়ী করেন অং।

হাতিয়ে নেওয়া মোট ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৬৩ মিলিয়ন ডলারের মতো মিডাস ও সোলাইরি ক্যাসিনোয় গেছে বলে জানান তিনি।

দেগিতোর দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরেই এ জালিয়াতিতে কিম অংয়ের নাম আসে। সিনেট কমিটির সামনে আসার আগে স্থানীয় গণমাধ্যমের সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন তিনি।

ব্লু রিবন কমিটির সদস্য সিনেটর সের্গিও ওসমেনাকে উদ্ধৃত করে ইনকোয়ারার এর আগে জানিয়েছিল, কিম অংই ওই ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো দেগিতোকে খুলতে বলেছিলেন। ফিলরেমেও ডলার ভাঙানোর নির্দেশও তিনিই দিয়েছিলেন।

১৫ বছর আগেও কিম অং একবার সিনেট ব্লু রিবন কমিটির শুনানির মুখোমুখি হন বলে ফিলিপিন্সভিত্তিক এবিএস-সিবিএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।

অবৈধ মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সে সময় ৩৯ বছর বয়সী অংকে ডাকা হয়েছিল। এক সিনেটরের সঙ্গে মাদক চোরাচালানিদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে ।

এবিএস-সিবিএনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর বয়সে চীন থেকে ফিলিপিন্সে আসেন অং। কলেজের ছাত্র থাকাকালে লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্থানীয় একটি সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির কাজে যোগ দেন।

পরে নিজেই একজন ব্যবসায়ী বনে যান এবং পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।

কিম অংয়ের সঙ্গে মায়া সান্তোস-দেগিতোকেও মঙ্গলবারের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি হাজিরা এড়িয়ে গেছেন বলে ইনকোয়ারার জানিয়েছে।