রিজার্ভ চুরি: ক্যাসিনোর সম্পদ জব্দে মামলা হচ্ছে

ফিলিপিন্সে চুরি করে নেওয়া বাংলাদেশের রিজার্ভের পুরো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আদায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ক্যাসিনো ও জাংকেট অপারেটরদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের জন্য মামলা করবে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ (এএমএলসি)।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2016, 11:47 AM
Updated : 5 April 2016, 01:53 PM

আগামী সপ্তাহেই এই মামলা করা হবে বলে অর্থ চুরির বিষয়ে সিনেটে মঙ্গলবারের শুনানিতে জানিয়েছেন এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকে-আবাদ।

ফিলিপিন্স ও ইন্দোনেশিয়ার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম র্যর‌্যাপলার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

শুনানিতে তিনি বলেন, “আমরা এর মধ্যেই আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহেই এই (বেসামরিক সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ) মামলা করতে পারব।”

ফিলিপিন্সে এই ধরনের মামলায়, অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করা হয়েছে এমন প্রমাণ পেলে সরকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। সেক্ষেত্রে সম্পদের মালিকের আইনি লড়াইয়ের অধিকার থাকবে। কিন্তু তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার সম্পদ বৈধ অর্থ থেকে এসেছে।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের রিজল কর্মাশিয়াল ব্যাংক পাঠানো হয়।

এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকে-আবাদ বলেছেন, বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দিতে তারা সম্পদ বাজেয়াপ্তের মামলা করবেন।

রিজল ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অর্থ ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ফিলিপিন্সের মুদ্রা ব্যবস্থায় মিশে যায় বলে স্থানীয় পত্রিকাগুলি খবর প্রকাশ করে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনার পেছনে চীনা বংশোদ্ভূত ক্যাসিনোর জাংকেট অপারেটর কিম অংকেই মূল ব্যক্তি বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।‌

এর মধ্যে দুই দফায় ৫৪ লাখ ডলারের বেশি অর্থ এএমএলসির কাছে ফেরত দিয়েছেন কিম।

তবে এই ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজে নামে দুই জাংকেট এজেন্ট ফিলিপিন্সে নিয়ে যায় বলে সিনেট কমিটির শুনানিতে দাবি করেছেন তিনি।

আর শুহুয়ার কাছ থেকে পাওয়া ধার উসুল হিসেবে পাওয়া অর্থই তিনি ফেরত দিচ্ছেন, চুরির সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।

অংয়ের ভাষ্যমতে, গাও প্রায়ই ফিলিপিন্সে যাওয়া-আসা করেন এবং গত আট বছর ধরে জুয়ার মক্কেল (জাংকেট এজেন্ট) এনে দেন। এই মহলে পরিচিতি রয়েছে তার। ম্যাকাওয়ের ব্যবসায়ী ডিংকেও তিনিই তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

গাও একবার সোলায়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোতে এক সপ্তাহের মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন ফিলিপিনো পেসো (প্রায় এক কোটি  ডলার) হেরে ওই অর্থ তার কাছ থেকে ধার করেছিলেন।

বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ থেকে ওই এক কোটি ডলার গাও তাকে পরিশোধ করেন বলে সিনেট শুনানিতে দাবি করেন অং।

এই এক কোটি ডলারের বাইরে দুটি ক্যাসিনোর জুয়ার অ্যাকাউন্টে থাকা আরও ৫৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

এছাড়া আরও ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার এখনও হাতবদল হয়নি এবং তা মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের কাছে থাকতে পারে বলে অংয়ের দাবি। তবে তা অস্বীকার করেছেন ফিলরেমের কর্মকর্তারা।

এদিকে লোপাট ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থ এখনও ফিলিপিন্সে রয়েছে জানিয়ে তা বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়া সম্ভব বলে গত ২৯ মার্চের শুনানির পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন
দেশটির সিনেটর রালফ রেক্তো।

সিনেটরের ওই বিবৃতির বরাত দিয়ে ম্যানিলা বুলেটিন জানিয়েছিল, প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার দুটি ক্যাসিনো ও মুদ্রা বিনিময় ব্রোকারেজ হাউজের কাছে রয়েছে।