রিজার্ভ চুরির পর গভর্নর ও দুই ডেপুটি গভর্নরের পরিবর্তনে কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা গেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র দাবি করেছেন, সব কাজ ‘স্বাভাবিকভাবেই’ চলছে।
Published : 16 Mar 2016, 10:57 PM
একসঙ্গে এত পরিবর্তনের পর বুধবার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সহকারী পরিচালক থেকে নির্বাহী পরিচালক পর্যন্ত সব কর্মকর্তাদের মধ্যেই অস্বস্তি টের পাওয়া গেছে।
মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে নিচু স্বরে কথা বললেও কাউকে দেখলেই সতর্ক হয়ে যাচ্ছিলেন তারা।
একজন মহাব্যবস্থাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৩৩ বছরের কর্মজীবনে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি। হঠাৎ করেই যেন সব এলোমেলো হয়ে গেছে।”
“আগেও গভর্নররা চলে গেছেন, কিন্তু সে পরিবেশ ছিল আলাদা। আমরা আগে থেকেই জানতাম এই দিনে গভর্নর চলে যাবেন। এও জানতাম নতুন গভর্নর কে হচ্ছে। এবার কী হল?”
“এদিকে একটা দুর্ঘটনা (রিজার্ভ চুরি) ঘটেছে। সেটা কীভাবে কে ঘটিয়েছে, তাও আমরা জানি না। সবমিলিয়ে কর্মজীবনের সবচেয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বা সময় পার করছি।”
১০ কোটি ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হারানোর খবরটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে ঘটলেও ফিলিপিন্সের সংবাদপত্র ইনকোয়ারার-এ ওই মাসের শেষে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তা প্রকাশ্যে আসে।
ওই অর্থের মধ্যে ফিলিপিন্সে যাওয়া বড় অংশ পাচার হয়ে যাওয়ার পর দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল তদন্তে নামলে বেরিয়ে আসে যে ওই অর্থ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের।
শুরুতে জানলেও ঘটনাটি চেপে রাখায় চাপের মধ্যে থাকা গভর্নর আতিউর রহমানকে মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র দিয়ে সরে যেতে হয়, বরখাস্ত হন দুজন ডেপুটি গভর্নরও।
একজন উপমহাব্যবস্থাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত বড় সঙ্কট আমি কখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেখিনি।”
সহকারী পরিচালক একজন তরুণ কর্মকর্তা বলেন, “একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। সবখানেই শুধু কানাঘুষা হচ্ছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না।”
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার অফিসে এসেই বর্তমান দুজন ডেপুটি গভর্নর নিজেদের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন।
একইসাথে নতুন গভর্নরের নিয়োগের কাগজপত্র সংগ্রহ, তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন তৈরির কাজও শুরু করেছে গভর্নর সচিবালয়।
নতুন গভর্নর হিসেবে সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবিরকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি ফিরবেন বলে জানানো হয়েছে।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে মামলা করেছে, তার তদন্ত সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তারা বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে কাজ করেছেন।
ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, সিআইডির কয়েকজন কর্মকর্তা এসেছেন, বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
“রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটা তদন্ত তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। কোনো হাই পাওয়ার এন্টি ভাইরাসের ঘাটতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটাও দেখা হবে।”
এই ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
শুভংকর সাহা বলেন, “সরকারি তদন্ত কর্মকর্তারাও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করছে।”
তবে এর মধ্যেই ব্যাংকের ‘স্বাভাবিক সব কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতেই চলছে’ বলে দাবি করেন তিনি।