এদিকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের গচ্ছিত ওই অর্থ কীভাবে লোপাট হল, তা খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে সরকার।
১০ কোটি ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হারানোর খবরটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে টের পেলেও তা প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক, জানানো হয়নি অর্থমন্ত্রীকেও।
ওই অর্থের মধ্যে ফিলিপিন্সে যাওয়া বড় অংশ পাচার হয়ে যাওয়ার পর দেশটির একটি সংবাদপত্রে খবর ছাপালে প্রকাশ পায় যে ওই অর্থ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের।
এরপর নানামুখী আলোচনার মধ্যে চাপে থাকা গভর্নর মঙ্গলবার সকালে পদত্যাগ করার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলার এজাহার নিয়ে যায় মতিঝিল থানায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে এই মামলা করেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা এই মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।”
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে।
এরআগে দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রিজার্ভের এই অর্থ চুরি তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের কথা জানান।
কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউচার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে কমিটির কাজের ক্ষেত্র ও আওতা জানানো হয়।
এই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন কীভাবে এবং কার বরাবর গেছে-কমিটিকে তা খতিয়ে বের করতে বলা হয়েছে।
অবৈধ পরিশোধ ঠেকানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপের পর্যাপ্ততা ছিল কি না, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন রাখার যৌক্তিকতা ছিল কি না, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্বে অবহেলা ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখবে এই কমিটি।
চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা এবং গৃহীত এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থাও এই কমিটিকে দেখতে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে কমিটিতে অতিরিক্ত সদস্য নিয়োগ করতে পারবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কমিটিকে সাচিবির সহায়তা প্রদান করবে এবং সব প্রকার ভৌত সুবিধা এবং ব্যয়ভার বাংলাদেশ ব্যাংক বহন করবে।
আতিউরের পদত্যাগের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নরের দুজন নাজনীন সুলতানা ও আবুল কাশেমকেও অব্যাহতি দিয়েছে সরকার।
আতিউরের উত্তরসূরি হিসেবে সাবেক অর্থ সচিব ফজলে কবিরের নামও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।