ফিলিপিন্সের সেই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরাও ছিল ‘অকার্যকর’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ যেদিন তোলা হয়েছিল, সেদিন ফিলিপিন্সের ব্যাংকটির সিসি ক্যামেরাগুলো অকার্যকর ছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2016, 05:24 PM
Updated : 16 March 2016, 11:45 AM

যাদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এই অর্থ সরানো হয়, তারাও ভুয়া তথ্য দিয়ে হিসাব খুলেছিলেন বলে ফিলিপিন্সের সংবাদপত্র ইনকোয়ারার জানিয়েছে, যারা প্রথম এই ঘটনাটি প্রকাশ করে।

ফিলিপিন্সের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্তে নামা দেশটির সিনেট ব্লু রিবন কমিটির চেয়ারম্যানকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি এই খবর দিয়েছে।

এই অর্থ চুরির সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের ডিলিং রুমের দুটি সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের মধ্যে ফিলিপিন্সের ব্যাংকেও একই ঘটনার তথ্য প্রকাশ পেল।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১ কোটি ডলার গত মাসে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয় বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।

এর মধ্যে ৮ কোটি ডলার ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকের কয়েকটি অ্যাকাউন্টে সরানো হয়, যার বড় অংশটি ব্যাংক চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো ২ কোটি ডলার আটকানো গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে ওই অর্থ ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখার পাঁচটি অ্যাকাউন্টে সরানোর পর ক্যাসিনোর মাধ্যমে বৈধ করে করে বিদেশে পাচার করা হয় বলে ইনকোয়ারার জানিয়েছিল।

ফিলিপিন্স সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান তেওফিস্তো গুংগোনা সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, রিজল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন হলেও ৯ ফেব্রুয়ারি যেদিন অ্যাকাউন্টগুলো থেকে এই অর্থ তোলা হয়েছিল, সেদিন সেগুলো ছিল অকার্যকর।

এই অর্থ দুটি ক্যাসিনোর মাধ্যমে সাদা করে হংকংয়ে পাচার করা হয় বলে ফিলিপিন্সের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।  

ঘটনাটি ‘কৌতূহল-উদ্দীপক’ মন্তব্য করে গুংগোনা বলেন, আগের দিনই চীনের নববর্ষ উদযাপন হয়েছিল। তার পরদিনই অর্থ তোলা হল, সিসি ক্যামেরাগুলোও কাজ করছিল না।

“সিসি ক্যামেরার এই কাজ না করাটা ভীষণ সন্দেহজনক,” বলেন তিনি।

এই অর্থ পাচারের তদন্তে থাকা ফিলিপিন্সের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) এর কাছ থেকে এই তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছেন সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান।

পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেনের খবর ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে আগে বলা হলেও গুংগোনা বলেন, চার ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই অর্থ তোলা হয়।

তাদের নাম হল এনরিকো তিওদোরো ভাসকুয়েজ, আলফ্রেদ সান্তোস ভারগারা, মাইকেল ফ্রান্সিসকো ক্রুজ ও জেসি ক্রিস্টোফার লাগরোসাস।

তবে ভুয়া প্রমাণপত্র দিয়ে অ্যাকাউন্টগুলো খোলার হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান গুংগোনা।

তিনি বলেন, “তাদের দাখিল করা নথিপত্র ছিল ভুয়া। যেমন তারা যে ড্রাইভিং লাইসেন্স জমা দিয়েছিল, তা ভুয়া।”

রিজল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখা, যার মাধ্যমে লেনদেন হয় বাংলাদেশের অর্থের

এই চারজন যে যে প্রতিষ্ঠানের চাকুরে বলে পরিচয় দিয়েছিলেন, সে সে প্রতিষ্ঠানে খবর নিয়ে তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

“তারা যে ঠিকানা দিয়েছিল, তাও ভুয়া।  কারণ ওই সব ঠিকানায় এসব নামে কাউকে পাওয়া যায়নি।”

পুরো ঘটনায় রিজল ব্যাংকের বড় ধরনের ত্রুটির বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেন গুংগোনা।

“গ্রাহক কে? সে কোথায় থাকে? কী করে?- এগুলো যাচাই সাধারণ বিষয়। কিন্তু ব্যাংকটি তা করেনি।”

রিজল ব্যাংকের ওই শাখার ব্যবস্থাপক মাইয়া সানতোস দেগিতো ইতোমধ্যে তদন্তের আওতায় রয়েছেন। তার বিদেশ যাওয়া সম্প্রতি আটকে দেয় দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।

দেগিতোর মুখপাত্র দাবি করেছেন, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কয়েক মাস আগে ওই অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছিল, যেগুলো এখন সন্দেহভাজন।

তবে দেগিতোর এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন রিজল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লরেঞ্জা তান। তদন্তের স্বার্থে তিনি দায়িত্ব পালন থেকে ছুটি নিয়েছেন।