আরও ৮শ মিলিয়ন ডলার হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক

শতাধিক মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়ার পরপরই হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা চালিয়েছিল, তবে তাতে সফল হয়নি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2016, 05:28 PM
Updated : 9 March 2016, 07:17 PM

দি ফিলিপিন্স ডেইলি ইনকোয়ারার বুধবার নতুন এই খবর দিয়েছে। ১০০ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়ার খবরটিও ফিলিপিন্সের এই সংবাদপত্রটি দিয়েছিল, যা নিয়ে বাংলাদেশে তোলপাড় চলছে।

সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) পাঁচটি অ্যাকাউন্টে আসে। এরপর তা তুলে নিয়ে ক্যাসিনোর মাধ্যমে সাদা করে হংকংয়ে পাচার করে দেওয়া হয়।

বলা হচ্ছে, চীনা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে এই অর্থ সরিয়েছে।

ফিলিপিনে অর্থ পাচারের এটিই সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে সেখানেও এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। আর তার তদন্তে রিজল ব্যাংকের যে শাখায় সন্দেহজনক ওই পাঁচটি হিসাব খোলা হয়েছিল, তার এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও খবর দিয়েছে ইনকোয়ারার।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদপত্রটি বলেছে, গত মাসে ৮১ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরের পর ওই পাঁচটি অ্যাকাউন্টে আরও ৮৭০ মিলিয়ন (৮৭ কোটি) ডলার স্থানান্তরের অর্ডার এসেছিল। কিন্তু আগের ঘটনার পর নতুন অর্থ স্থানান্তর আর করা হয়নি।

ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন, যার মাধ্যমেই হয়েছিল লেনদেন

তবে আগের ৮১ মিলিয়ন ডলার সঙ্গে সঙ্গে স্থানান্তর হয়ে গিয়েছিল বলে তা আর আটকানো যায়নি বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০০ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সে ঢোকার কথা জানিয়েছিল ইনকোয়ারার।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরানো হয় ফিলিপিন্সে, ২০ মিলিয়ন ডলার সরানো হয় শ্রীলঙ্কায়।

শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে পাঠানো অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বুধবারই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা। ফিলিপিন্সের অর্থের একটি অংশ ব্যাংক চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে বলে জানান তিনি।

ইনকোয়ারার বলেছে, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ সরানো হয় ফিলিপিন্সের ব্যাংকটিতে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সরানোর আদেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী অর্থ স্থানান্তর হয়ে যায়।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “ওখান থেকে তারা (ফেডারেল রিজার্ভ) বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বার্তা প্রেরণ করেন। আমরা তোমাদের এই রকম একটা হুকুম পেয়েছি। তোমরা এটা কনফার্ম কর।

“জবাবে তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) বলেছে, এটা ফলস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা পাওয়ার আগেই লেনদেনটা হয়েছে।”

ইনকয়ারের প্রতিবেদনেও একথাই বলা হয়েছে।

তবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক এক্ষেত্রে তাদের দায় অস্বীকার করলেও বাংলাদেশ বলছে, তারা দায় এড়াতে পারেন না। অর্থ ফেরত পেতে তাদের বিরুদ্ধে মামলারও হুমকি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

ব্যাংক থেকে জুয়ায়

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোপাট হওয়া অর্থ রিজল ব্যাংক থেকে তুলে কীভাবে হংকংয়ে পাচার হয়েছিল, তার একটি বর্ণনাও দিয়েছে ইনকোয়ারার।

সংবাদপত্রটি বলেছে, রিজল ব্যাংকের পাঁচটি অ্যাকাউন্টে ৮১ মিলিয়ন ডলার আসার পর তা তুলে মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর করা হয়। যাতে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন পেসো।

তারপর এই অর্থ রিজল ব্যাংকের চীনা বংশোদ্ভূত এক ফিলিপিনো নাগরিকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। তিনি ওই অর্থ তুলে নিয়ে যান দুটি ক্যাসিনোতে- সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো এবং সিটি অফ ড্রিমস অ্যান্ড মাইডাসে।

সিটি অফ ড্রিমস

সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো

সেখানে ‘চিপস’ দিয়ে জুয়া খেলার পর আবার পেসোতে রূপান্তরিত করে ওই ব্যক্তি এই অর্থ রেমিটেন্স হিসেবে হংকংয়ে পাঠান বলে ইনকোয়ারার জানতে পেরেছে।

এই কেলেঙ্কারি তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এই অর্থ পাচারে ক্যাসিনো ব্যবহার হয়েছে এটা ঠিক। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।

রিজল ব্যাংকের মাকাটি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখায় খোলা পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা সরানো হয় বলে ইনকোয়ারার জানিয়েছে।

ব্যাংকের ওই শাখার প্রধান এখন তোপের মুখে রয়েছেন। তবে তার এক প্রতিনিধি ইনকোয়ারারকে বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই ওই অ্যাকাউন্টগুলো কয়েক মাস আগে খোলা হয়েছিল।

“তিনি বুঝতে পারছেন যে, তাকে এখন বলির পাঠা বানানো হবে। তাই তিনি মুখ খুলতে চাইছেন,” বলেন তার প্রতিনিধি।

অর্থ পাচারের এই কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে ফিলিপিন্সে। আগামী ১৪ মার্চ সিনেট কমিটিতে এর শুনানিতে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বক্তব্য দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফিলিপিন্সের ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন এই ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তে নেমেছে ফিলিপিন্স অ্যামিউজমেন্ট ও গেমিং কর্পোরেশনও, যারা ক্যাসিনোর অনুমোদন দিয়ে থাকে।