ঢাকার মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে আরও দেড় বছর এবং ব্যয় প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার।
Published : 19 Jan 2016, 02:35 PM
মঙ্গলবার প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এ প্রকল্পের সংশোধনীসহ দশটি উন্নয়ন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভার পর এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। আগে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
“রাস্তার নিচে যে পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইন রয়েছে সেজন্য প্রকল্পের কাজ শুরু করার সময় সমন্বিত নকশা করা হয়নি। এ কারণে এখন কাজ বেড়েছে। তাছাড়া এফডিসি থেকে সোনারগাঁও পর্য়ন্ত ও হাতিরঝিল এলাকায় সম্প্রসারণের কারণে ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূকম্পনরোধক করতে গিয়েও প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।”
এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
“বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্পটির মেয়াদ আর কোনোভাবেই বাড়ানো হবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার মগবাজার-মৌচাক-সাতরাস্তা রোড এলাকায় যানজট হ্রাস পাবে, ভ্রমণ সময় কমবে, যা সার্বিকভাবে ঢাকা মহানগরীর বসবাস পরিবেশকে উন্নত করবে।”
ঢাকার যানজট নিরসনে ১৯৯৯ সালের ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের (ডিটিসিবি) সমীক্ষা অনুযায়ী ২০টি পয়েন্টে ফ্লাইওভার/আন্ডারপাস, বাস বে, বাস টার্মিনাল, পার্কিং এরিয়া নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
তারই অংশ হিসেবে মহাখালী ও খিলগাঁও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প ২০১১ সালে অনুমোদন পায়।
২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলেও দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্প এলাকাজুড়ে নির্মাণ কাজের ডামাডোলে নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
সংস্থা দুটির ৫৭২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে ৭৭৬ কোটি টাকা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ২০০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দশ উন্নয়ন প্রকল্প
একনেকের সভায় এদিন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পসহ যে দশ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬০৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা আসবে; সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৫১ কোটি ৩৭ লাখ যোগানো হবে এবং ৭৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা পাওয়া যাবে বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে।
৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘বাংলাদেশের নদী বক্ষের বালিতে মূল্যবান খনিজের উপস্থিতি নির্ণয় ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন’ প্রকল্প।
‘এলইডি লাইট (সিকেডি) অ্যাসেমব্লিং প্ল্যান্ট ইন ইটিএল’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।
‘নীলফামারী-জলঢাকা সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর ৬৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যন্ড ৫০০ বেডেড মেডিকেল কলেজ হসপিটাল অ্যাট সিরাজগঞ্জ’ প্রকল্প।
‘মান্দা শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট স্থাপন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
৬৪ কোটি ১০ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সহায়তা (২য় পর্যায়) প্রকল্প।
আর ‘কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ১৯৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার বরাদ্দ সরকার অনুমোদন করেছে।