৩৯.৫% মানুষ টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’ পায়নি: টিআইবি

টিআইবি বলছে, কার্ড না পাওয়াদের মধ্যে ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ বাদ পড়েছেন বিভিন্ন ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2022, 12:44 PM
Updated : 11 August 2022, 12:44 PM

সরকারের ‘আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তা কর্মসূচির’ অর্ন্তভুক্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পায়নি বলে তুলে ধরা হয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক সমীক্ষায়।

দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থা বলছে, যারা বাদ পড়েছেন, তাদের ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার ফ্যামিলি কার্ড পায়নি ‘বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির’ কারণে। স্বেচ্ছায় কার্ড নেয়নি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার, আর ১৪ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার বাদ পড়ার কারণ জানে না।

বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ নূরে আলম।

তিনি বলেন, দেশের ৩৫টি জেলা থেকে মোট ১ হাজার ৪৭ জন তাদের এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন, তালিকা প্রণয়নের সময় যোগ্য-হতদরিদ্র ব্যক্তিদের ‘বাদ দিয়ে’ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘সচ্ছল ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

“৭৬ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। এর বাইরে ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের আত্মীয়-স্বজনদের এবং ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশের মতে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।”

যারা টিসিবির ফ্যামিলির কার্ড পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪ শতাংশ তালিকাভুক্তি ও কার্ড বিতরণের বিভিন্ন পর্যায়ে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ শিকার হওয়ার কথা বলেছেন।

টিআইবির প্রতিবেদন বলছে, পণ্য বিক্রির তারিখ/কেন্দ্রের অবস্থান সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাননি বা প্রচারণা ছিল না বলে দাবি করেছেন ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। যদিও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পণ্য বিক্রির চার দিন আগে মাইকিং করে পণ্য বিক্রির স্থান ও সময় জনসাধারণকে জানিয়ে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

“কিন্তু কার্ড বিতরণ ও পণ্য ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হওয়া উপকারভোগীদের ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ অভিযোগ করেননি বা করতে পারেননি।

“তাদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ঝামেলা, হয়রানি বা নেতিবাচক পরিস্থিতির ভয়ে; ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ কীভাবে অভিযোগ করতে হয়, তা জানা না থাকায় এবং ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রয়োজন মনে না করায় অভিযোগ করেনি।”

ইউক্রেইন যুদ্ধ, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও রিজার্ভের ওপর চাপসহ নানা চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ায় গত মার্চ-এপ্রিলে নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারকে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এই ফ্যামিলি কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৪ শতাংশ নারী ‘বঞ্চিত হয়েছে’ দাবি করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ জরিপ তাদের গবেষণা পরিকল্পনার মাঝে না থাকার পরও নিম্ন আয়ের মানুষের অধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করে তারা গবেষণার কাজটি করেছেন।

“সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে তালিকা প্রণয়নে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন সুপারিশের মাধ্যমে এই সুবিধা পেয়েছেন এবং একই পরিবারের একাধিক সদস্য কার্ড পেয়েছেন এই ধরনের অনিয়ম, স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে। প্রান্তিক জনগণ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে…।”

স্বচ্ছতার মাধ্যমে এই কার্যক্রম ভবিষ্যতে পরিচালনা করা না গেলে সরকারের ‘উদ্দেশ্য সফল হবে না’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরামের তত্ত্বাবধায়নে পাঁচ সদস্যের গবেষকের দল চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ সমীক্ষা চালান।