“আর্থিক খাতের তথ্যে ত্রুটি থাকলে তখন অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানা যায় না,” বলেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।
Published : 12 Nov 2022, 11:53 PM
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সময়ে অর্থনীতির যে তথ্য প্রকাশ করে তা ভুল হলে কিংবা অসময়ে প্রকাশ পেলে যে রাষ্ট্রেরই ক্ষতি হয় সে কথাই এক ওয়েবিনারে মনে করিয়ে দিলেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ও বৈদেশিক ঋণ' শীর্ষক এ ওয়েবিনারে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, “সরকার অনেক তথ্যই নিয়মিত প্রকাশ করছে না। করলেও তা যথাযথ নয়, এটি সাধারণভাবে বোঝা সম্ভব নয়। এতে অর্থনীতির সংকট কতটা গভীর তা বুঝতে পারা যায় না।’’
যথাযথভাবে তথ্য উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যেকোনো ক্রাইসিস বাড়িয়ে দেখানোর দরকার নেই। আবার কমিয়ে দেখানোরও দরকার নেই। যা যতটুকু তা ততটুকুই দেখানো প্রয়োজন।”
টাকার অবমূল্যায়ন আগে করলেই ‘ভালো হতো’ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান আকাশ বলেন, “এখন চাপে পড়ে বেশি কমছে টাকার মান। এতে মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ায় জনগণ কষ্ট পাচ্ছে।”
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরা সব সময়েই বলেছি, আর্থিক খাতের তথ্য যথাযথ হওয়া প্রয়োজন। কোথাও ত্রুটি থাকলে তখন অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানা যায় না।”
রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের যে উদ্বেগের কথা সবাই বলছে, তা আমরা অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিভিন্ন সময়েই বলে আসছি। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে আমদানিতে উল্লম্ফন হয়েছে, তার একটি দায় এখন তৈরি হয়েছে রিজার্ভে।
“এর বেশিরভাগই নন আরএমজি (তৈরি পোশাক) খাতের। এই ঋণ আমাদের পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে আমরা ডেফার্ডও করতে পারব, যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদনও দিয়েছে। কিন্তু এটি সমস্যা সমাধানে নেওয়া উদ্যোগগুলোর একটি অংশ মাত্র।“
আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার উদ্যোগকে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ বর্ণনা করে তিনি বলেন, “যা আরও ঋণ পেতে সহায়তা করেবে। একপর্যায়ে অর্থনীতির এই অস্বস্তি কেটে যাবে।”
ফুটো হওয়া কলসিতে যেমন পানি থাকে না, তেমনই দুর্নীতি, লুটপাট, দুর্বত্তায়ন ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে না পারলে অর্থনৈতিক সংকটে নেওয়া উদ্যোগ সফল হবে না বলে মতামত দেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তার কথায়, “বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান অস্থিরতার জন্য দুর্নীতি ও সুশাসন উন্নয়নে আইএমএফ কোনো শর্ত দিয়েছে কি না, তা আমরা জানি না। যেমনটি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বেলায় গুরুত্ব দিয়েছিল আইএমএফ।”
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক প্রবাসী বাংলাদেশি জিয়া হাসান।
মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ নিয়ে বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া বলেন, “তথ্য সঠিক সময়ে প্রকাশ না করায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। সামষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায় না, তাতে দুর্ভোগে পড়ে জনগণ। যেমনটি এখন হয়েছে, অর্থনীতি চাপে পড়ায় জনগণ কষ্ট পাচ্ছে।”
সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক আলী রিয়াজ।