তবে অর্থনীতির অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকার আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি।
Published : 30 Jul 2024, 09:28 PM
দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান সূচক অবনমন করে ‘বি প্লাস’ করেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল।
মঙ্গলবার ‘বিবি মাইনাস’ থেকে এ সূচক এক ধাপ কমিয়ে ‘বি প্লাস’ করলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকার আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি।
স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি) ২০১০ সালের পর থেকে ক্রেডিট রেটিং দেওয়ার পর এই প্রথম তা কমাল। ওই বছর সংস্থাটির কাছ থেকে প্রথমবারের মতো ঋণমান পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একই রেটিং ‘বিবি মাইনাস’ পেয়ে আসছে।
এদিন নিজেদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং প্রকাশ করে ঋণমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি অবনমনের কারণও তুলে ধরেছে।
একই সঙ্গে তারা সূচকে উন্নতি কীভাব ঘটতে পারে সেটিও উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ যদি চলতি হিসাবে উন্নতি ঘটায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয় তাহলে ঋনমান সূচকে উন্নয়ন ঘটবে।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ক্রলিং পেগ চালু করা ও সংকোচনশীল মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে রিজার্ভ পতন ঠেকানো সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে ২০২৩ সালের জুলাইতে এসঅ্যান্ডপি বাংলাদেশের ঋণমান আগের মত 'বিবি মাইনাস' রাখলেও অর্থনীতির অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক হওয়ার আভাস দিয়েছিল।
এছাড়া চলতি বছর মে মাসে বাংলাদেশের রেটিং কমিয়েছিল আন্তর্জাতিক আরেক ঋণমান সংস্থা ফিচ রেটিংস। ‘বিবি মাইনাস’ থেকে ‘বি প্লাস’ এ নামিয়ে এনেছিল সংস্থাটি। তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস (আউটলুক) স্থিতিশীল বলে উল্লেখ করেছিল ফিচ।
অপরদিকে ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১ এ নামায়।
মঙ্গলবার এসআ্যন্ডপি বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক অর্থায়নের চাহিদার চাইতে জোগান কম। বৈদেশিক লেনদেন স্থিতিশীল নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার জোগানের যা চাহিদা তা রেমিটেন্স ও রপ্তানির মাধ্যমে যা আয় হয় তার চাইতে অনেক বেশি। এতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। এটি চাপ তৈরি করেছে অর্থনীতিতে।
অপরদিকে রাজস্ব আয়ের অনুপাতের হিসাবে সুদের ব্যয়ও বেশি বলে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং কমার পেছনে এ দুটি কারণ তুলে ধরেছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে , ক্রলিং পেগ ও সুদহারে সীমা উঠিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপগুলো সঠিক থাকলেও তা অর্থনীতে কার্যকর হতে বেশ সময় লাগবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পেগ চালু করলেও এটা একটা অন্তর্বতীকালীন একটা পদ্ধতি। কিন্তু এটা কতদিন চলবে সে সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু বলছে না। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারভিত্তিক হওয়া নিয়ে একটা ধোঁয়াশাও রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে আগামীতে কী ধরনের নীতি গ্রহণ করা হবে তা বলা কঠিন মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এসঅ্যান্ডপি বলছে, মূলত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা না বাড়ার কারণে রিজার্ভ পতন থামছে না। তাতে সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা ও আমদানি বাড়লেও রপ্তানি বাড়ছে না।
অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা আসার চাইতে বাইরে চলে যাচ্ছে বেশি। তাতে লেনদেন ভারসাম্যে মে মাস শেষে চলতি হিসাব ঋণাত্মক দাঁড়িয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির ঋণপত্র খোলায় ব্যাংকগুলোতে নানা রকম কড়াকড়ি আরোপ করলেও বাণিজ্য ঘাটতি আছে।
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার দর নির্ধারণ, রিজার্ভ পতন এবং লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবের ওপর নির্ভর করেই ঋণমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ঋণমান সূচক ঠিক করেছে।
এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পূর্বাভাসের চেয়ে চলতি হিসাব বেশি ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার দ্বারা রিজার্ভ পতন ঠেকানো বন্ধ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ প্রতিবেদনে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্র আন্দোলনের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাতে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় সরকার টেলিযোগাযোগ ব্ল্যাকআউট এবং দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট অধিকাংশ কোটা বাতিল করে।
এ ঘটনা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভবিষ্যৎ নীতি প্রতিক্রিয়ার পূর্বাভাসকে দুর্বল করে দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন...
মুডি'স রেটিংয়ে অবনমনে কী প্রভাব অর্থনীতিতে?
বাংলাদেশের ঋণমান 'নেতিবাচক' হওয়ার আভাস এসঅ্যান্ডপির
বাংলাদেশের ঋণমান আবার কমাল ফিচ
মুডি'স রেটিংয়ে ঋণমান কমল বাংলাদেশের
সাত ব্যাংকের রেটিং 'নেতিবাচক' করল মুডি'স