“কোম্পানিকে মারতে এক সেকেন্ড লাগবে না। ফান্ডিং বন্ধ করে দিলে কালকেই কোম্পানি মরে যাবে। কিন্তু কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখা অনেক চ্যালেঞ্জ”, বলেন তিনি।
Published : 11 Nov 2024, 07:48 PM
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকোর গ্রুপের সব কোম্পানিকে সচল করতেই তত্ত্বাবধায়ক বা ‘রিসিভার’ নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
রোববার বাংলাদেশ পর্ষদ সভায় দেশের অন্যতম এই শিল্প গ্রুপে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরের দিন রাজধানীতে এক আয়োজনে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, “রিসিভারশিপ দেওয়া মানে এই না যে বেক্সিমকোকে ‘অচল’ করে দেওয়া হল। বেক্সিমকোকে ‘সচল’ রাখতেই এই রিসিভারশিপ দেওয়া হয়েছে।”
হোটেল সোনারগাঁয়ে বাণিজ্যবিষয়ক পত্রিকা বণিক বার্তার আয়োজনে ‘তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে আহসান মনসুর বলেন, “গত কয়েকমাস ধরেই বেক্সিমকোর বেতন-ভাতাদি কিন্তু আমরা সরকার থেকে দিচ্ছি অনেকাংশেই। এইভাবে তো চলতে পারবে না। ফ্যাক্টরি তো সরকার চালাতে পারবে না।
বেক্সিমকোতে তত্ত্বাবধায়ক বসাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
“আমরা যেটা দেখতে চাচ্ছি, বেক্সিমকোতে রিসিভারশিপ দিয়ে যেটা করতে চাচ্ছি, ফান্ড যেন ডাইভারট না হয়। বেক্সিমকোর যে এক্সপোর্ট হচ্ছে, সেই টাকাটা যেন বাংলাদেশে আসে। এবং সেটা দিয়েই যেন লেবারের খরচটা মেটাতে পারি। সেটা দিয়েই যেন বাণিজ্যিক কার্যক্রমটা চালিয়ে রাখতে পারি।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই ঢাকার গুলশানে সালমান এফ রহমানের বাসভবনে হামলা হয়। হামলাকারীরা বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুরো বাড়িটিই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সালমান রহমান শেখ হাসিনার সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে ভারত চলে গেছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হলেও তাকে গত ১৩ অগাস্ট গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।
গাজীপুরে বেতনের দাবিতে বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বিক্ষোভ
গাজীপুরে বেতনের দাবিতে বেক্সিমকো শ্রমিকদের দুই দফা সড়ক অবরোধ
এরপর তাকে আন্দোলনে হত্যার একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়, আইএফআইসি ব্যাংকের পর্ষদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, এক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ১৭টি মামলা হয়েছে; সালমান, তার ছেলে ও পুত্রবধূর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়, পুঁজিবাজারে অনিয়ম খুঁজতেও কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সরকার পতনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ঋণ অনুমোদন করার পর বকেয়া পরিশোধের খবর এসেছে সংবাদ মাধ্যমে।
এরপর ৫ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার বসানোর বিষয়ে একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চায় কেন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে না।
দুই মাস পর রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিনকে রিসিভারের দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
১০০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে ১৭ মামলা
পুঁজিবাজারে সালমান ও এস আলমের 'অনিয়ম' খুঁজতে কমিটি
এটিই উপমহাদেশের কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিতে প্রথম রিসিভার নিয়োগ বলেও সেদিন জানানো হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপকে বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “কোম্পানিকে মারতে এক সেকেন্ড লাগবে না। ফান্ডিং বন্ধ করে দিলে কালকেই কোম্পানি মরে যাবে। কিন্তু কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখা অনেক চ্যালেঞ্জ। কাজে আমরা চেষ্টা করছি কোম্পানিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়নি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কোন ব্যাংক, অ্যাকাউন্ট যেটা কোনো বিজনেস প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত, সেটাকে কিন্তু আমরা ব্লক করি নাই, সেটা পুরোপুরি উন্মুক্ত ওপেন আছে।
সালমান রহমান ও আনিসুল হক গ্রেপ্তার
“আমি এক্সিম ব্যাংকে গত মাসে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছে জাস্ট টু পে, গার্মেন্ট ওয়ার্কারদের বেতন দেওয়ার জন্য। এগুলো আমরা কী কারণে করছি? কারণ হচ্ছে যে, কোনো প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না হয়ে যায়। কোনো প্রতিষ্ঠানে যেন শ্রমিকরা আগুন লাগিয়ে না দেয় বা ভাঙচুর না করে।”