কৃষি ঋণের অর্ধেক বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার তাগাদা গভর্নরের

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2022, 05:19 PM
Updated : 22 Nov 2022, 05:19 PM

কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদের ঋণ পৌঁছে দিতে কৃষি খাতের বিতরণকৃত ঋণের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বাণিজি্যক ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি বিতরণের তাগাদা দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম মিলনায়তনে ‘বেসরকারি ব্যাংক সমূহের সঙ্গে কৃষি ঋণ বিতরণে সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই গভর্নরের পক্ষ থেকে এমন তাগাদা আসে।

মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি করেছে, তা মোকাবেলায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি। তা জানানোর সঙ্গে ফসল ও শস্য উৎপাদনে ৪ শতাংশ সুদে বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ ও কৃষি ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে গতি আনতে ব্যাংকারদের নির্দেশনা দিতে সভাটি ডাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দেশের খাদ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগামীতে কৃষি খাতে অর্থ প্রবাহ বাড়াতেই ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতি বছরই ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণ বিতরণে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংক, সে পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক জমা নিয়ে নেয়। এই অর্থের বিপরীতে কোনো প্রকার সুদ দেয় না বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী বছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে অর্থ ফেরত পায় বাণিজ্যিক ব্যাংক।

এজন্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরাসরি ও বিভিন্ন এনজিও বা সংস্থার মাধ্যমে বিতরণের সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ব্যাংকগুলোকে সরাসরি বিতরণ করতে হয়। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশই অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করার সুযোগ রয়েছে।

বৈঠকে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে তাগাদা দেন গভর্নর।

এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করলে ৮ শতাংশ সুদে কৃষক পর্যায়ে ঋণ পৌঁছানো সম্ভব হয়। কিন্তু এনজিওদের মাধ্যমে বিতরণ করলে ২২ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হয় কৃষকদের।

সভার বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কৃষি ঋণে গতি বাড়াতে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন গভর্নর। প্রান্তিক পর্যায়ের এ ঋণ তুলণামূলক ঝুঁকিমুক্ত। এ ঋণে সাধারণত খেলাপি হয় না।”

এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহববুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়াতে প্রয়োজনে সরকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নেওয়ার কথাও বলেছেন গভর্নর।

সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান এবং কৃষি ঋণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত জুলাই মাসে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ‘কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি’ ঘোষণায় প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে বাংলাদেশ ব্যাংক; যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।

ফসল ও সবজি চাষে চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয় ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার চেয়ে বেশি।