জুলাইয়ে সামান্য কমেছে মূল্যস্ফীতি, আশা দেখছেন পরিকল্পনামন্ত্রী

গত বছর জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর সে মাসে তা কিনতে ১০৭ টাকা ৪৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2022, 10:36 AM
Updated : 3 August 2022, 10:36 AM

সরকারি হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির পারদ সামান্য নেমেছে, বর্তমান সঙ্কটের সময়ে যাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বুধবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে ‘পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে’ সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

অর্থাৎ, গত বছরের জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর জুলাই মাসে তা কিনতে ১০৭ টাকা ৪৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির হাত ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার গত জুন মাসে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে পৌঁছায়, যা নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেখান থেকে কমে জুলাই মাসে এই ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তার দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “আমার মনে হয় অগাস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির এই হার আরও একটু কমবে। আমি গণক নই, তবে আমার ধারণা কমার একটা লক্ষণ আমি লক্ষ্য করছি।”

তিনি জানান, জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় ০.৮ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। তবে গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে । গত বছরের জুলাই মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল।

সরকার এ বছর অর্থনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে। অবশ্য পরিসংখান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে হিসাব প্রকাশ করে, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি তার চেয়ে বেশি বলে অর্থনীতিবিদেরা কারও কারও ধারণা।

মহামারীর ধাক্কা সামলে অর্থনীতির গতি বাড়ায় গতবছরের শেষ দিক থেকেই মূল্যস্ফীতি ছিল বাড়তির দিকে। চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য বাড়তে শুরু করে। তার প্রভাব পড়ে অন্যান্য পণ্যেও।

এই পরিস্থিতিত টানা নয় মাস ধরে ৬ শতাংশের বেশি রয়েছে মূল্যস্ফীতির হার। তাতে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসার খরচ মেটাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত জুলাই মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে, যা জুন মাসে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ছিল।

আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি জুন মাসে ছিল ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক মাসের মাথায় তা বেড়ে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছে।

গ্রামের মানুষকে মূল্যস্ফীতির কারণে ভুগতে হচ্ছে শহরের মানুষের চেয়ে বেশি। জুলাই শেষে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার সামান্য কমে ৮ দশমিক শূন্য ০২ শতাংশ হয়েছে, যেখানে শহরে এই হার ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

গ্রামে খাদ্য খাতে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ মূল্যস্ফতি হয়েছে জুলাই মাসে। আর খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

আর শহরাঞ্চলে খাদ্য উপখাতে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে না, এটা তার ‘প্রমাণ’।

“অর্থনৈতিক পরিস্থিতির একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। পুরো অর্থনীতিটাকে এটা রিফ্লেক্ট করে এটা অর্থনীতির একটা প্রতিচ্ছবি। এই মূল্যস্ফীতি পুরো অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে।

“আর কম আয়ের মানুষের ওপর এটা আঘাত করে বেশি। জনগণের সরকারকে এটা চিন্তা করতে হবে। নিম্ম আয়ের মানুষের লাইফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়- এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মান্নানের ভাষায়, জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি যতটা কমেছে, সেই হার ‘অনেক কম’ বলে মনে হলেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এটাও ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’।

“শুধু যে কমেছে তা নয়, মাথার ছোবলটা একটু নুয়েছে। এটা আরও নুয়ে আসবে,” বলেন তিনি।

এই ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেইন থেকে খাদ্য নিয়ে জাহাজ ছাড়া শুরু হয়েছে।

“অলরেডি জাহাজ ভেসে বেড়াচ্ছে, আমরাও পাব। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য পণ্যের দাম কিছুটা ফল করেছে। এই বেনিফিট এখন আরও আসবে।”

জুন থেকে জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমল- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “মূল কারণ হচ্ছে খাদ্য দ্রব্যের দাম কমে আসা। সয়াবিন তেল আমাদের খাদ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পণ্যটির দাম কিছুটা কমে আসায় এর প্রভাব পড়েছে। চালের দাম কমতে শুরু করা আরেকটা কারণ।

“দেশে হঠাৎ চালের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার গত মাসে চাল আমদানির সুযোগ করে দেয়। এরপর থেকে চালের দামও কমতে শুরু করেছে। প্রধানত এই দুই পণ্যের দাম কমার কারণেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।”

বেসরকারি কিছু গবেষণা সংস্থা মূল্যস্ফীতির যে ভিন্ন হিসাব দেখায়, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “বিবিএস এর বাস্কেটে ৪২২টি পণ্যের মূল্য সংগ্রহ করি। এর মধ্যে দেশের সকল মানুষের ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র থাকে।

“কিন্তু ওই সংস্থাগুলো শুধুমাত্র কম আয়ের মানুষের ব্যবহারের, বিশেষ করে খাদ্য পণ্যের দাম বেশি ছিল বলে তারা বেশি মূল্যস্ফীতি হিসাব পেয়েছিল। কিন্তু সার্বিক মূল্যস্ফীতির হিসাবতো তাদের মত করে শুধুমাত্র খাদ্য নিয়ে তৈরি করতে পারি না।”