আপাতত ইউএস ডলারকে রেফারেন্স ধরে টাকা-রুপির বিনিময় হার ঠিক হবে।
Published : 12 Jul 2023, 12:17 AM
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপিতে যে বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু হয়েছে, সেই লেনদেনের জন্য আলাদা করে রুপি কিনতে পারবে না এই দেশের ব্যাংক।
মঙ্গলবার এই লেনদেন ব্যবস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) কান্ট্রি ম্যানেজার অমিত কুমার জানান, পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংক যে রুপি আয় করবে, তাই দিয়ে কেবল আমদানির দায় পরিশোধ করা যাবে।
এই সীমা ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ঠিক করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলার আমদানি দায় পরিশোধ করা হয়; যা মোট আমদানি ব্যয়ের ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। এর বিপরীতে রপ্তানি করা হয় ১৯৯ কোটি ডলার।
লেনদেন যেভাবে
প্রাথমিকভাবে দুই দেশের দুটি করে করে চারটি ব্যাংক রুপিতে আমদানি-রপ্তানি করার অনুমতি পেয়েছে ।
দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনে ভারতের ব্যাংকগুলোতে রুপিতে ‘নস্ট্র অ্যাকাউন্ট’ খুলেছে সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক-ইবিএল। নস্ট্র হিসাব হল- বিদেশের কোনো ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করতে খোলা হিসাব।
এর ফলে ডলারের মাধ্যমে এলসি বা ঋণপত্র খোলার প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি রুপিতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির জন্য ভারতের ব্যাংক দুটিতে ঋণপত্র খুলতে পারবেন দেশটির আমদানিকারকরা।
একইভাবে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যাংক দুটিতে ঋণপত্র খুলতে পারছেন আমদানিকারকরা।
‘পাওয়ার পয়েন্ট’ উপস্থাপনায় অমিত কুমার দেখান, বাংলাদেশ থেকে পণ্য বুঝে নেওয়ার পর ভারতীয় ব্যাংকে থাকা এ দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের হিসাবে রুপিতে জমা হয়ে যাবে পণ্য মূল্য। আর সেই রুপি দিয়ে ভারতের উদ্যোক্তাদের কাছে বাংলাদেশের আমদানি দায় মেটাতে হবে।
আন্তর্জাতিক লেনদেনের স্বীকৃত ব্যবস্থা সুইফট ব্যবহার করেই রুপিতে লেনদেন হবে জানিয়েছেন অমিত কুমার।
তিনি বলেন, ভারতে থাকা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকে রপ্তানির আয় যোগ হওয়ার পর স্থানীয় রপ্তানিকারককে টাকায় পণ্য মূল্য পরিশোধ করে দিবে বাংলাদেশের ব্যাংক। এটি হবে বাংলাদেশের আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) লেনদেন ব্যবস্থার মাধ্যমে।
ডলার রেফারেন্সে বিনিময় হার
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে আপাতত টাকা-রুপির বিনিময় হার ঠিক হবে ইউএস ডলারকে রেফারেন্স ধরে।
অমিত কুমার বলেন, যতোদিন না টাকা-রুপির সরাসরি বিনিময় হার ঠিক করা হবে, ততদিন ডলারকে রেফারেন্স দর হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বিনিময় হার বিবেচনায় নিলে প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮২ রুপি পাওয়া যায়। অন্যদিকে প্রতি ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা পাওয়া যায় ১০৮ টাকা।
ডলারকে ভিত্তি দর ধরে ১ রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রায় পাওয়া যাবে শূন্য দশমিক ৭৬ টাকা বা ৭৬ পয়সা। আর প্রতি রুপি কিনতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের দিতে হবে এক টাকা ৩১ পয়সা।
দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি শুরু
মঙ্গলবার ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে রুপিতে ভারত থেকে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। বগুড়ার কোম্পানি তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ভারতীয় রুপির পণ্য কেনার জন্য ভারতীয় আমদানিকারকের এলসি খোলার মধ্য দিয়ে হয় প্রথম লেনদেন।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ঢাকা শাখার মাধ্যমে এ রপ্তানি করা হয়। ভারতের আমদানিকারক ঋণপত্র (এলসি) খোলে দেশটির আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রুপিতে প্রথম আমদানি করে নিটা কোম্পানি। এসবিআই ঢাকা শাখার মাধ্যমে তারা এক কোটি ২০ লাখ রুপির পণ্য আমদানির আদেশ দেয়। এসবিআই এর মুম্বাই শাখা পণ্য আমদানিতে ভারতে প্রতিনিধি ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে।
প্রথম আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি হিসেবে কোম্পানিগুলোর মালিকদের অনুষ্ঠানে দেওয়া হয় স্মারক উপহার।
রুপিতে বাণিজ্য শুরু: ‘বড় সূচনার প্রথম পদক্ষেপে’ বাংলাদেশ ও ভারত