“শহরের দারিদ্র্যের হার কিছুটা কমলেও আর্থিক দুর্বলতা বেড়েছে,” বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর।
Published : 27 Dec 2023, 09:03 PM
আয়ের পাশাপাশি ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে গড়ে পরিবারপ্রতি ঋণও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে; সরকারি এক জরিপ বলছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি পরিবারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৪ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘খানা আয় ব্যয় জরিপ ২০২২’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গ্রামের চেয়ে শহুরে পরিবারগুলো বেশি ঋণগ্রস্ত। শহরের পরিবারের ঋণ গ্রামের পরিবারের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
বুধবার ঢাকার আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে ‘হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) ২০২২’ জরিপের চূড়ান্ত ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিবিএস ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে খানার আয়-ব্যয়ের তথ্য জানতে এ জরিপ চালায়। ১৪ হাজার ৪০০ খানার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গত এপ্রিলে এ জরিপের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল। এবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হল। এর আগে ২০১৬ সালে একই জরিপ চালানো হয়েছিল।
এদিন জরিপের চূড়ান্ত ফলাফল উপস্থাপনকালে বিবিএস এর উপপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ২০২২ সালে জাতীয়ভাবে প্রতিটি পরিবারের গড় ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। ছয় বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৬ হাজার ২৩৭ টাকা বা ৯৬ দশমিক ০১ শতাংশ। ২০১৬ সালের একই জরিপে পরিবারপ্রতি ঋণ ছিল ৩৭ হাজার ৭৪৩ টাকা।
তিনি জানান, গড়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ২৬ ধরে মাথাপিছু ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গ্রামের পরিবারের তুলনায় শহুরে পরিবারগুলো বেশি ঋণগ্রস্ত। শহরের পরিবারগুলোর গড় ঋণ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৬ টাকা। গ্রামীণ পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে যা ৪৪ হাজার ১১১ টাকা। অর্থাৎ শহরের পরিবারগুলো গ্রামের পরিবারের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি ঋণে ডুবে আছে।
ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের জরিপে শহরের পরিবারের ঋণ ছিল ৫৯ হাজার ৭২৮ টাকা এবং গ্রামের পরিবারের যা ছিল ৩১ হাজার ৩৩২ টাকা। ওই সময় গ্রাম ও শহরের পরিবারের ঋণের ব্যবধান ছিল দ্বিগুনের কম।
চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে, গত ছয় বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের গড় আয়ও ব্যাপকভাবে বাড়তে দেখা গেছে। ২০২২ সালের সবশেষ জরিপে পরিবারপ্রতি গড়ে আয় হয়েছে মাসে ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। ২০১৬ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে আয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
২০২২ সালে গড়ে প্রতি পরিবার মাসে ব্যয় করেছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৬ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা। ২০১০ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল পরিবারগুলো গড়ে মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা ব্যয় করেছিল।
‘আয় বৈষম্য’ বেড়েই চলছে, সরকারের খানা জরিপে প্রকাশ
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বক্তব্যের ভিডিও প্রচার করা হয়।
বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহাী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য কাউসার আহমেদ বক্তব্য দেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর বলেন, শহরের দারিদ্র্যের হার কিছুটা কমলেও আর্থিক দুর্বলতা বেড়েছে। মধ্যবিত্তের আয় কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। একইসঙ্গে কমেছে খাদ্য গ্রহণও।
দেশে বৈষম্য ‘আশঙ্কাজনক পর্যায়ে’ পৌঁছে গেছে মন্তব্য করে জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশের উচ্চ আয়ের মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের কাছে রয়েছে দেশের মোট আয়ের ৩০ শতাংশ। যেখানে নিন্ম আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মাত্র ১৮ শতাংশ আয়।
“তাই এখন দারিদ্র্যের চেয়ে বৈষম্যই বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি দেশ থেকে টেকসই দারিদ্র্যহার কমানোর জন্য দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।