ডলার সংকট: আন্তঃব্যাংক বাজারকে আরও সচলের পরামর্শ প্রধান নির্বাহীদের

ডলারের সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ব্যাংকার্স বৈঠকে জানিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2022, 04:37 PM
Updated : 25 July 2022, 04:37 PM

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ঊর্ধ্বগতি ও ডলার সংকট সমাধানের উপায় বের করতে ব্যাংকারদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ বৈঠকের পরামর্শ দিয়ে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা আন্তঃব্যাংকে ডলার কেনাবেচার বাজারকে আরও সচল করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে ব্যাংকার্স বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।

বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ও বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপের কথাও বৈঠকে ব্যাংকারদের জানানো হয়েছে।

Also Read: বিক্রির চেয়ে কিনতেই বেশি আগ্রহ মানি এক্সচেঞ্জের

সভা শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এর চেয়ারম্যান ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আরএফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ডলারের সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা গভর্নরকে বলেছি ডলারের ইন্টার ব্যাংক মার্কেটকে আরও সচল করা যাবে কীভাবে, সে বিষয়টিতে বলেছি। গভর্নর আমাদের কাছ থেকে তথ্যভিত্তিক সুপারিশ চেয়েছেন।

“গভর্নর আমাদের জানিয়েছেন বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে আগামিতে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যাংকারদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়ে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।“

সোমবার আন্তঃব্যাংকে টাকার বিপরীতে ডলারের মান ক্রমেই বেড়ে হয়েছে ৯৪ দশমিক ৭০ টাকা, যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আবার চাহিদার বিপরীতে ডলার সংকট রয়েছে ব্যাংকগুলোতে। একই কারণে খোলা বাজারেও প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ছাড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘ব্যাংকারদের অনিষ্পত্তি হওয়া রপ্তানি আয় সমাধান করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এতে ডলার সরবরাহ বাড়বে।“

প্রতি তিন মাস পর গভর্নরের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা বৈঠক করেন যা ‘ব্যাংকার্স সভা’ হিসেবে পরিচিত।

সোমবারের সভায় ডেপুটি গভর্নররাসহ কয়েকজন নির্বাহী পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

এদিন বৈঠকে ১৮ জুলাই জারি করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার, ডলার সংকট এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ বাড়ানোর নিয়ে আলোচনার সূচি ছিল।

ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষমতা বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপর ছেড়ে দেওয়াতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঝুঁকি বাড়বে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সেলিম আরএফ হোসেন জানিয়েছেন, এতে ব্যাংকের দায়িত্ব বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘‘সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে ব্যাংকের জন্য কোনো সমস্যা হবে না। ব্যাংকারদের দায়িত্ব বেড়ে যাবে। আরও দক্ষ ও পেশাদার হতে হবে।

এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঋণ পুনঃতফসিল করতে প্রতিদিন শতাধিক আবেদন গ্রহণ করতে হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে। এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপর পুরোটাই ছেড়ে ভার কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার গ্রাহক তাকেই ভালোভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাকে কীভাবে পুনঃতফসিল করতে হবে ঠিক করবে। এক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে কি না তা পরিদর্শন করে দেখা হবে।’’

ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষমতা বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক গভর্নররা। এতে ব্যাংক খাতে নতুন সংকট তৈরি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে ব্যাংকের উদ্যোক্তারা চার দফা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে ২৯ বছর নিয়মিত থাকতে পারবেন।

গুরুত্ব বিবেচনায় এদিন ব্যাংকার্স বৈঠকের বড় অংশজুড়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।