শেখ হাসিনা বলেন, তার দল আবারও ক্ষমতায় গেলে যুব বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
Published : 27 Dec 2023, 04:06 PM
ভোটে জয়ী হয়ে ফের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেড় কোটি নতুন কর্মসস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ।এক্ষেত্রে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
আগামী দুই বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার কমিয়ে আনাসহ স্বল্পশিক্ষিত তরুদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের জন্য ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
এসবের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়াতে অনলাইন শ্রমবাজারের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে।
বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তরুণ সমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। জনমিতিক পরিবর্তনে ২০৪১ সালে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স হবে ৩০ বছরের কম; ১৫-২৯ বছর বয়সের তরুণের সংখ্যা কম বেশি ২ কোটি। বাংলাদেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আওয়ামী লীগ এই তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখবে।
“কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসার করা হবে। জেলা ও উপজেলায় ৩১ লক্ষ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
পরিসংখ্যান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিত তরুণ ও যুবসমাজের জন্য যথোপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হবে।”
অনলাইনে শ্রমবাজার সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়ছে ইশতেহারে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “অনলাইন শ্রমের বাজারে বিভিন্ন পেশাদারি সেবাসমূহ যুক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ, পর্যালোচনা ও ব্যাখ্যা, পে-রোল, আইটি সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের কাজসহ আরও নতুন নতুন ক্ষেত্র সংযুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ধীরে ধীরে দেশের সকল উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় 'যুব প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান কেন্দ্র' স্থাপন করা হবে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭.৮ শতাংশ যুবদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আগামী ৫ বছরে ২ লক্ষ জন যুবকদের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার জন যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে দেশে-বিদেশে বিকাশমান কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটগুলো ঢেলে সাজানোর কথাও বলা হয় ইশতেহারে।
তিনি বলেন, “যুবসমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পাঠাগার স্থাপন, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং 'স্মার্ট ইয়ুথ হাব' গড়ে তোলা হবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেবার জন্য বিশেষ সেল গঠন করে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে। অসহায়, অসমর্থ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম যুবদের শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।”
মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নিরসন এবং মাদকাসক্তদের ও মাদক ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি এসেছে এই ইশতেহারে।
শেখ হাসিনা বলেন, “অবকাঠামোর উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটকে 'সেন্টার অব এক্সেলেন্স' হিসেবে গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে।”
কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠার জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া হবে বলেও ইশতেহারে বলা হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, “দেশে প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি মানুষ শ্রম শক্তিতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। শিল্প খাতের বিকাশ এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এদের প্রত্যেকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য।
“কর্ম সংস্থানের জন্য সবচেয়ে বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা। এ খাতের বাধা সমূহ দূর, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও বিদেশি মানবসম্পদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এই খাতকে আরও শক্তিশালী, সুসংগঠিত ও গতিশীল করে তোলা হবে।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ইশতেহার প্রণয়ন উপ কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুস রাজ্জাক ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।