বাংলাদেশের অনুমোদিত মুদ্রার বিনিময় করতে অতিরিক্ত কোনো ফি, চার্জ বা অর্থ নেওয়া দণ্ডনীয়। তবে ফুটপাতের এসব দোকানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।
Published : 19 Apr 2023, 10:48 PM
ঈদে এবার বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট ছেড়েছে কম, অথচ চাহিদা তুঙ্গে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও পাননি তাদের চাওয়া অনুযায়ী। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনের ফুটপাতসহ নানা জায়গায় অভাব পড়েনি নোটের। সেখানে অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে বান্ডেল।
ফুটপাতে নতুন নোট কীভাবে আসে, সে প্রশ্ন নতুন নয়। কিন্তু কখনও এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এবারও যাচ্ছে না। ব্যাংকে না পাওয়ার কারণে এবার ফুটপাতের দোকানিরা দাম হাঁকছেন বেশি।
ফুটপাতে ১০, ২০ ও ৫০ টাকা মানের নতুন নোটের এক বান্ডেল (১০০টি) বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত ২৫০ টাকা দরে; যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। গত বছরও নতুন নোটের জন্য বান্ডেলপ্রতি বেশি দিতে হয়েছে ৮০ থেকে বড়জোর ১০০ টাকা।
৫৫ হাজার টাকারে নতুন নোট নিয়েছেন, এমন একজনকে অতিরিক্ত দিতে হয়েছে ৫ হাজার ২৫০ টাকা। অর্থাৎ টাকার মানের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। তার মানে ১০ টাকা তিনি কিনেছেন আসলে ১১ টাকায়।
যারা একটি বা দুটি বান্ডেল কিনেছেন, তাদের ক্ষেত্রে ১০ টাকার দাম ১২ বা সাড়ে টাকা পর্যন্ত পড়ে গেছে।
অথচ আইনে মুদ্রা বিক্রি অপরাধ। বাংলাদেশের অনুমোদিত মুদ্রার বিনিময় করতে অতিরিক্ত কোনো ফি, চার্জ বা অর্থ নেওয়া দণ্ডনীয়। তবে ফুটপাতের এসব দোকানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির মেলে না।
টাকার দাম নোটের মানের চেয়ে বেশি
ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ যাওয়ার আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সজীব হায়দার নতুন নোট নিতে এসেছিলেন ব্যাংকে। সেখানে না পেয়ে তিনি মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের ফটকের সামনের ফুটপাতে যান। সেখানে দোকানিরা ‘বাড়াবাড়ি রকম’ টাকা চাইছেন বলে মনে হচ্ছে তার কাছে।
ঈদ সালামি দিতে ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকা মানের বিভিন্ন নোট মিলিয়ে ৫৫ হাজার টাকা নিয়েছেন সজীব। এ জন্য তাকে অতিরিক্ত প্রায় ১০ শতাংশ খরচ করতে হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘এই টাকা নিতে অতিরিক্ত ৫ হাজার ২৫০ টাকা দিতে হয়েছে বিক্রেতাকে। তাও অনেক মুলামুলি (দর কষাকষি) করার পর। তারা আরও ১৫০ টাকা দাবি করেন।’’
সজীব একসঙ্গে অনেকগুলো নোট নেওয়ার কারণে তার তবু টাকা কিছুটা কম পড়েছে। ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের প্রতি বান্ডেলের বিপরীতে অন্যদের ১৭ এপ্রিল অতিরিক্ত ১৮০ থেকে ২০০ টাকা আর পরদিন দুপুর থেকে ২৫০ টাকা করে বেশি নিতে দেখা গেছে।
গুলিস্তানের নতুন নোট বিক্রেতা হাসানুজ্জামান শান্ত বলেন, ‘‘১০ ও ২০ টাকার প্রতি বান্ডেল নিতে ২৫০ টাকা বেশি দিতে হবে।’’
২ টাকার বান্ডেল বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা বেশি দরে। অর্থাৎ ২০০ টাকা তিনি বিক্রি করেছেন সাড়ে তিন শ দিয়ে।
রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, মিরপুর, ফার্মগেইট ও পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকাতেও নতুন নোট বিক্রির এই কারবার চোখে পড়ে।
পটুয়াখালী যাওয়ার পথে বুধবার গুলিস্তান থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম। ৫ হাজার টাকার ৫ ও ১০ টাকার নতুন নোট কিনতে তাকে অতিরিক্ত দিতে হয়েছে ৯০০ টাকা, অর্থাৎ শতকরা ১৮ শতাংশ।
ঈদের আগের দিন হিসেবে শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকার দোকান খোলা রাখবেন ইমতিয়াজ মন্ডল। কর্মচারীদেরকে সালামি দিতে গুলিস্তানে তিনি ১০ হাজার টাকার ১০ টাকার নোট নিতে এসে তার আক্কেলগুড়ুম।
বিক্রেতারা এই ১০ হাজার টাকার জন্য চাইছিলেন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, অর্থাৎ ২৫ শতাংশ বেশি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে চেয়েছি। কোনো বিক্রেতাই রাজি হচ্ছেন না?’’
১০০ টাকার নতুন নোট নিলে বান্ডেল প্রতি অতিরিক্ত ৩০০ টাকা দিতে হবে জানান বিক্রেতা হাসানুজ্জমান শান্ত।
ধাতব মুদ্রার প্রচলন গত কয়েক বছর ধরে ২ ও ৫ টাকার নোট বাজারে ছাড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এবার ৫ টাকার নোট ছেড়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
নতুন নোট কম কেন, নেই ব্যাখ্যা
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার ঈদে নতুন নোট ছেড়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকার। গত বছরের ঈদুল ফিতরে ছাড়া হয় ২৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ঈদুল আযহার সময়ে ছাড়া হয়েছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রতি ঈদের সময়েই নতুন টাকার চাহিদা বেড়ে থাকে। এবার নতুন ছাপানো নোটের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগ। কেন এই সিদ্ধান্ত, সে বিষয়ে দেওয়া হয়নি ব্যাখ্যা।
বাজারে টাকা কত টাকা রয়েছে, অর্থনীতির আকার অনুযায়ী কোন মুদ্রা কত পরিমাণে থাকবে, তা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বটি পালন করে থাকে এই কারেন্সি বিভাগ।
বর্তমানে দেশে ১ টাকার ধাতব মুদ্রা, কাগজের পাশাপাশি ধাতব মুদ্রা রয়েছে ২ ও ৫ টাকার। আর ১০, ২০, ৫০, ১০০ ও ১০০০ টাকার কাগজে ছাপানো মুদ্রা রয়েছে।
ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ১৮ এপ্রিল দিনের প্রথম ভাগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট ফুরিয়ে যায়। এমনকি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকেও এসব নোট পাননি। কাউন্টারে না পেয়ে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কারেন্সি অফিসারের কক্ষের সামনে অনেক কর্মকর্তাকে ভিড় জমাতে দেখা গেছে।
তুলনা মূলক কম টাকা ছাড়ার বিষয়ে কারেন্সি অফিসার প্রকাশ চন্দ্র বৈরাগী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
গত ৯ এপ্রিল থেকে নতুন টাকার নোট বিনিময় শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকেও তা পাওয়া যাওয়ার কথা জানানো হয়। সে সময় প্রয়োজনে আরও বেশি পরিমাণে নতুন নোট বাজারে ছাড়ার কথাও জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এবার নতুন নোট কম ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট আমাদের স্টকে ছিল। এখন তার চেয়ে বেশি বা কম ছাড়া হয়েছে কি না, সঠিক হিসাব এখনো করা হয়নি।’’
আরও পড়ুন