“এ বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভ বাড়ানোর মত পদক্ষেপ নাই।’’
Published : 11 Jun 2024, 12:10 AM
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটির আকার আরো ছোট হতে পারত বলে রাজধানীতে একটি আয়োজনে মত দিয়েছেন আলোচকরা। মোটা দাগে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো বাজেটে গুরুত্ব পায়নি বলেও মত উঠে আসে এতে।
সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাজেট পর্যালোচনায় এই আয়োজনটি করে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, নোয়াব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘বাজেট গতানুগতিক ধারায় হয়েছে। অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও জ্বালানি সংকটের মত তিনটি বড় দাগের চ্যালেঞ্জ আছে। এসব সমাধানে কোনো প্রস্তাবনা রাখা হয়নি।”
সুশাসন ও আর্থিক খাতের সংস্কারে উদ্যোগ না আসায় ‘ঋণ, ঋণ, খেলাপি’ ব্যবসায়ীদের মডেল হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এ বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভ বাড়ানোর মত পদক্ষেপ নাই।’’
সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনা দরকার ছিল মত দিয়ে তিনি অর্থনীতির সংকট সমাধানে সমস্যাগ্রস্ত জায়গাগুলোতে শক্ত হতে সরকারকে পরামর্শ দেন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘ব্যাংক খাতের দুর্বলতা একদিনে সৃষ্টি হয়নি, তাই সমাধানও চটজলদি হবে না।
“এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কাজটি হল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির মাধ্যমে। সেখানে সরকার বাজেটে সহায়তা দেবে মাত্র। সরকার কিন্তু বাজেট বেশি বড় না করে সেই সহায়তা দিচ্ছে। এখন মুদ্রানীতির মাধ্যমেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাকি কাজটি করতে হবে।’’
বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা থাকলে আগামী ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে পর্যবেক্ষণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি বর্তমানের চেয়ে কমলেও পণ্য মূল্য কিন্তু কমবে না। মূল্য যেটুকু বাড়বে, তা হয়ত খুব বেশি আর বাড়বে না।’’
বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণে যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে হস্তক্ষেপ করা যাবে না বলেও মত দেন তিনি।
জনপ্রশাসনে খরচ কমিয়ে আনতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মতো অনেক মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তর কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন আহসান এইচ মনসুর।
বিদ্যুৎ খাতে সুবিধা নেওয়াদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক এই দুঃসময়ে বিশেষ কিছু ছাড় সরকারের নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও নোয়াব সভাপতি মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ হানিফ আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন।
রেমিটেন্স ছাড়া সবগুলো সূচকই অস্বস্তিতে রয়েছে জানিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘ঘাটতি বাজেট দেওয়া হলেও উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন খাতে কোনো কাটছাঁট করা হয়নি। অথচ অর্থনীতির এই ধরনের সংকটের সময় কৃচ্ছ্র সাধন করা দরকার ছিল।’’
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেটের ১৭ শতাংশ ব্যয় দেখানোকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্র সুদ ব্যয়ও এখানে দেখানো হয়েছে। এসব বাদ দিলে বাজেটের ৯ শতাংশ হবে সামাজিক সুরক্ষা খাতে। আর প্রকৃত সামাজিক সুরক্ষা বিবেচনায় নিলে তা বাজেটের এক শতাংশ হবে।’’
পেনশন খাতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাজেটের প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘জনপ্রশাসন ব্যয় এই সময়েও বাড়ানো হয়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উদ্যোগ নেই। মানুষ স্বস্তি পায় এমন কিছু নেই বাজেটে।’’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থসচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, সিএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।