তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা বলছে, নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির হার যুক্তিযুক্ত হয়নি।
Published : 06 Jun 2024, 06:51 PM
গত বছরের মত এবারও দাম এক ধাপ বাড়িয়ে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা, সেই সঙ্গে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রী গত বছরের মতই এবারও বিড়ির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেননি।
সিগারেটের মতই বাড়ছে জর্দা ও গুলের দামও।
তবে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো শুল্ক বাড়ানোর এই প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছে, কর আরও বেশি বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের সুযোগ নষ্ট করেছেন অর্থমন্ত্রী।
দাম কতটা বাড়ছে
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “সিগারেটের নিম্নস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৫০ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করছি। যা গত অর্থবছরে দশ শলাকার মূল্যস্তর ৪৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ ছিল।
মন্ত্রী মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর গত বছরের চেয়ে ৩টাকা বাড়িয়ে ৭০ টাকা ও তদূর্ধ্ব, উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১১৩ টাকা থেকে ১২০ টাকা ও তদূর্ধ্ব, অতি- উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা ও তদূর্ধ্ব নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেন তিনি।
এই তিন স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এবার (২০২৪-২৫) ৬৫.৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাতে তৈরি (ফিল্টার বিযুক্ত) বিড়ির ২৫ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮ টাকা, ১২ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯ টাকা ও আট শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন।
যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাতে তৈরি (ফিল্টার সংযুক্ত) বিড়ির ২০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৯ টাকা ও ১০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়।
প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য গত বছরের চেয়ে ৩টা বাড়িয়ে ৪৮ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে দুই ক্ষেত্রেই সম্পূরক শুল্কের হার গত বছরের মতই ৫৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রজ্ঞার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশের পর পর তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা এক বিবৃতিতে নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণের বিষয়ে বলে, এই ৫টাকা বাড়ানো মানে প্রতি শলাকার মাত্র পঞ্চাশ পয়সা বেড়েছে যা (১১.১১ শতাংশ)। আর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ।
বাজেটে মধ্যমস্তর, উচ্চস্তর এবং প্রিমিয়াম বা অতিউচ্চ স্তরের দাম যথাক্রমে ৪.৪৮ শতাংশ, ৬.১৯ শতাংশ এবং ৬.৬৭ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক ০.৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে দাম যথাক্রমে ৬.৬৭ শতাংশ ও ৮.৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে এবং উভয় ক্ষেত্রেই সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
বিড়ির দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা এবং যে হারে তিনস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে তাতে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য ‘সস্তা হয়ে পড়বে’ বলে উল্লেখ করেছে প্রজ্ঞা।
এর ব্যাখ্যায় সংগঠনটি বলেছে, “কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী চিনি, আলু, আটাসহ বেশকিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ২০২১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ৪০ শতাংশ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪.৪৮ শতাংশ থেকে ১১.১১ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হয়ে পড়বে।”
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির তুলনায় সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুলের প্রস্তাবিত দাম বৃদ্ধি ‘কম হওয়ায়’ সব ধরনের তামাকপণ্য আরো ‘সহজলভ্য’ হবে বলেও মত দিয়েছে প্রজ্ঞা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য (সাময়িক) অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, “এই বাজেট পাস হলে তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয়ের সুযোগ থেকে সরকার বঞ্চিত হতে হচ্ছে।”