চলতি পঞ্জিকা বছর ২০২৪ সালে মার্চ ও জুলাই ছাড়া সব মাসে রেমিটেন্স ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
Published : 01 Aug 2024, 07:34 PM
ইন্টারনেটবিহীন সময়ে ব্যাংক বন্ধ থাকার ধাক্কার মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিটেন্স এসেছে ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম।
তবে একক মাসে জুলাইয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর পরিমাণ ১০ মাসের মধ্যে কম। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সাংবাদিকদের জুলাই মাসে রেমিটেন্স আসার এ তথ্য দেন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স কমেছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ের আগের মাস জুনে ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। তাতে ভর করে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রেমিটেন্স আসে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ৩১ জুলাইতে ১২ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এরপরও পুরো মাসে মোট রেমিটেন্স ২ বিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারেনি। চলতি পঞ্জিকা বছর ২০২৪ সালে মার্চ ছাড়া সব মাসে রেমিটেন্স ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মার্চে এসেছিল ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।
জুলাইয়ে রেমিটেন্স কম আসার ক্ষেত্রে কোরবানি ঈদের পরের মাস এবং কোটা
সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ পাওয়ায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কথা বলছেন ব্যাংকারসহ বিশ্লেষকরা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা ১৮ জুলাই মারাত্মক রূপ নিলে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় ব্র্যাডব্যান্ড ইন্টারনেট, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল আগেই। পরে জারি করা হয় কারফিউ। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় তিন দিন।
পরে ইন্টারনেট ফিরলে এবং কারফিউ শিথিল হলে ২৪ জুলাই থেকে স্বল্প পরিসরে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকাররা বলছেন, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ২৩ তারিখ পর্যন্ত রেমিটেন্স আসা বন্ধ ছিল।
২৪ ও ২৫ জুলাই স্বল্প পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চললেও রেমিটেন্স এসেছে খুবই কম।
আরও পড়ুন:
ইন্টারনেট 'ব্ল্যাকআউটে' রেমিটেন্সে বড় ধাক্কা
৪৭ মাস পর সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এল জুনে
অর্থনীতির বিশ্লেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরও ইন্টারনেট ব্ল্যাকয়াউট থাকার কারণে রেমিটেন্স কমার কথা বলেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ইন্টারনেট না থাকার পাশাপাশি বিদেশে থেকে রেমিটেন্স না পাঠানোর একটা আলোচনা চলছে। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদি হবে না। তাই রেমিটেন্স ব্যাংকিং চ্যানেলেই আসবে সামনে।
"তবে গত কয়েক মাস ধরে ডলার প্রবাহ বেড়েছে, যেটা জুলাইতে কমল। তা কাটিয়ে উঠলেও আগের মত রেমিটেন্সের ধারা করতে পারবে কি না সেটা একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।"
তিনি বলেন, " ইন্টারনেট না থাকার কারণে হুন্ডি ব্যবসা বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যা ঘটেছে তা এখনও চলমান। একটা অস্থিরতা আছে। এই রকম অস্থিরতা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। এমন অবস্থা চলমান থাকলে সকল পেশাজীবি বাইরে টাকা পাচার করতে চাইবে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহে (২১ থেকে ২৭ জুলাই) দেশে রেমিটেন্স এসেছে মাত্র ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
এর আগে তৃতীয় সপ্তাহে (১৪ থেকে ২০ জুলাই) ৪৫ কোটি ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহে (৭ থেকে ১৩ জুলাই) ৬০ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং প্রথম সপ্তাহে (১ থেকে ৬ জুলাই) ৩৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
এ পরিস্থিতি সামনের দিনে কাটিয়ে ওঠার আশা প্রকাশ করে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, " ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে রেমিটেন্সের ধারা কমেছে। প্রবাহ এখনও আগের মত বাড়েনি। তবে সামনে বাড়বে বলে আশা করি।"