এই কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দেবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে।
Published : 28 Aug 2024, 09:25 PM
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
কমিটিতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ছাড়া আরও এগারোজনকে সদস্যকে করা হয়েছে; তাতে প্রাধান্য পেয়েছে অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি খাতের গবেষকরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগের কথা গত ২২ অগাস্ট জানিয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যে এই কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন, সেদিনই সে কথা জানানো হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর এবার কমিটির বাকি সদস্যদের নাম এল।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আরো একজন সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান আছেন এ কমিটিতে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. ম তামিম এবং বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও ডাক পেয়েছেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী ইকবাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফকেও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটর (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকীকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে।
আরো আছেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শারমিন্দ নীলোর্মি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক; বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম; ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।
‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ নামের এ কমিটি অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মতবিনিময় করবে।আগামী ৯০ দিনের মধ্যে তারা সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে।
দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোর একটি তালিকাও প্রস্তাব করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
সেগুলো হল- অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার; নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি; দুর্নীতি দূরীকরণ; ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা; কর ও শুল্ক নীতির সংস্কার এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শুরুতেই সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রস্তাবে।
সেখানে বলা হয়েছে, “গত প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে নিপতিত রয়েছে। বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি- বিদেশি ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে।
“অর্থ বিভাগের সূত্রে পত্রিকান্তরে প্রকাশ যে, পতনকালে শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা বাংলাদেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান। অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা না করে, দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের ঋণের প্রতি বিগত সরকার ঝুঁকেছিল।”
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহের হার ১৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত ছয় সাত বছরে এ অনুপাত ১১ শতাংশ থেকে উল্টো ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এটি একটি দিক মাত্র।
“সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি, অর্থ-পাচারের অবাধ সুযোগ, বাজার সিন্ডিকেট ইত্যাদির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বলা যেতে পারে, বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে।”
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলছে, “বিগত সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট অর্থনীতির নজিরবিহীন নাজুক পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে।”
কমিটির সদস্যরা অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন; পরিকল্পনা কমিশন কমপ্লেক্সের যথোপযুক্ত কোনো ভবনকে কমিটির দপ্তর হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে; পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ওই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিতে পারে এবং সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর বা সংস্থা প্রস্তাবিত কমিটির চাহিদানুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করবে।
পুরনো খবর