কাতারের আমিরের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক, নতুন জ্বালানি চুক্তির ‘আশ্বাস’

নতুন চুক্তি শিগগিরই স্বাক্ষরিত হবে বলে আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 05:16 PM
Updated : 24 May 2023, 05:16 PM

কাতার থেকে আরও জ্বালানি পেতে দেশটির কাছ থেকে নতুন চুক্তির জন্য আশ্বাস পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বুধবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতের পর তিনি এ কথা জানিয়েছেন। আল থানির কার্যালয় আমিরি দিওয়ানে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বৈঠকে জ্বালানি প্রসঙ্গে কাতারের আমির বলেছেন, কাতার থেকে বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা কয়েক মাস ধরে বিবেচনাধীন রয়েছে।

“আমি আমির হিসাবে আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, বন্ধু দেশ হওয়ায় আমি আপনাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেব।”

মোমেন বলেন, “এটি (প্রতিশ্রুতি) বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। এই নতুন চুক্তি শিগগিরই স্বাক্ষরিত হবে।”

২০১৭ সাল থেকে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ।

কাতারের রাশ লাফান লিক্যুফাইড নেচারাল গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বর্তমান চুক্তির আওতায় বার্ষিক ১.৮ থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।

সাইড লেটার চুক্তির মাধ্যমে এর অতিরিক্ত হিসেবে বছরে আরও ১ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানির জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এর আগে প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু তখন কাতার তাতে সাড়া দেয়নি।

বুধবারের বৈঠকটি অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বৈঠকে জ্বালানি, ব্যবসা ও বিনিয়োগ ও বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশি জনশক্তি ও মুসলিম উম্মাহ নিয়েও হয়েছে আলোচনা।

বৈঠকে কাতারের আমির বলেন, তারা একসময় বাংলাদেশকে দুর্যোগ ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবেই জানতেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতি দূর করেছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গত সাড়ে ১৪ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। পাশাপাশি চরম দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে এনেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে।

“আমি বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত করেছি। দারিদ্র্য একটি অভিশাপ। …বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কিছুটা এগিয়েছি, কিন্তু আমার কাজ শেষ হয়নি। আমি আরও কাজ করতে চাই। কিন্তু আমি একা তা করতে পারব না, আমি আপনার সাহায্য চাই। আমার আরও বিনিয়োগ দরকার।

“আমি আমার দেশকে বিনিয়োগের জন্য খুলে দিয়েছি। আপনি পারস্পরিক সুবিধার জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন।” 

প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমিরকে এ বছরের মধ্যে সম্ভব হলে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

জবাবে আল থানি বলেন, তিনি অবশ্যই বাংলাদেশ সফর করবেন এবং এটি এই বছরের মধ্যেই হবে।

মুসলিম বিশ্ব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুচ্ছ বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে, যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য অন্তরায়।

তিনি কাতারের আমিরকে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নে ঐক্যের জন্য কাজ করার অনুরোধ জানান।

জবাবে আমির বলেন, তিনি হয়ত মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন না। তবে মুসলিম উম্মাহ যাতে আরও অগ্রসর হয়, সে বিষয়ে তার প্রচেষ্টা থাকবে।

কাতারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা সম্পর্কে আমির বলেন, এখন ৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি এখানে আছেন এবং তারা কাতারের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কাতার নতুন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশিরা এখানেই থাকবে।

“তারা পরিশ্রমী ও আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আমরা বাংলাদেশিদের নিয়ে খুবই খুশি।”

পরে প্রধানমন্ত্রী দোহায় কাতার ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি বিশেষায়িত স্কুল আওসাজ একাডেমি পরিদর্শন করেন। সেখানকার শিক্ষার্থীদের আঁকা শিল্পকর্ম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি অটিস্টিক শিশুদের আঁকা চারটি শিল্পকর্ম ওই একাডেমিকে উপহার দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “একাডেমি কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে যে, তারা একটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবে।”