রিজার্ভ বাড়াতে এবার বিশ্ব ব্যাংকের বাড়তি বাজেট সহায়তায় নজর

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির কাছে অতিরিক্ত ২৫ কোটিসহ ৫০ কোটি ডলার চেয়ে দেওয়া চিঠিতে আগের প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2023, 02:30 AM
Updated : 22 Dec 2023, 02:30 AM

ডলার সঙ্কট ও রিজার্ভ ক্ষয়ের চাপ কমাতে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বাড়তি ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। 

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির কাছে মোট ৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিঠি দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।  

অর্থনীতির ধীরগতি কাটানোর মাধ্যমে স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি শক্তিশালী রাখতে ‘সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ চাওয়া হয়েছে। 

কর্মকর্তাদের আশা, বিশ্ব ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অনুমোদনের পর চলতি অর্থবছরের মধ্যে এ নিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হবে। 

এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের মুখপাত্র মেহরিন এ মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককে বলেন, “চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট প্রকল্পের অনুমোদন বিশ্ব ব্যাংক বোর্ডে বিবেচনার কথা রয়েছে। 

“আশা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে চলতি অর্থবছরের মধ্যে চুড়ান্ত চুক্তি হতে পারে।” 

ইআরডির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চলতি মাসের প্রথম দিকে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ওই প্রকল্পের বিপরীতে মোট ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (সাবপ্রোগ্রাম-১) এর আওতায় ৪০ কোটি ডলার দিয়েছে। এ অর্থ ইতোমধ্যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। 

এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর একই প্রকল্পের আওতায় অর্থায়ন করতে দক্ষিণ কোরিয়া ইআরডির সঙ্গে ৯ কোটি ডলারের একটি ক্রস চুক্তি করেছে। ইআরডি কর্মকর্তাদের আশা, এটি দ্রুতই ছাড় হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যুক্ত হবে। 

এছাড়া আরেক বহুপক্ষীয় অর্থায়নকারী এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় একটি প্রকল্পের জন্য ৪০ কোটি ডলার দেবে বলে প্রতিশ্রুত দিয়ে রেখেছে। 

ওই অর্থও রিজার্ভে যুক্ত করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের। 

বাজেট সহায়তা দিতে বিশ্ব ব্যাংক এর আগে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক সমঝোতা করেছিল। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে কোভিড-১৯ এর অভিঘাত মোকাবিলা এবং কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রকল্পের আওতায় এ সহায়তা দিতে চায়। ওই সমঝোতার আওতায় প্রতি অর্থ বছরে ২৫ কোটি ডলার করে চার অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। 

ইআরডির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সে সসয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য বেশ কিছু নীতি সংস্কারের পদক্ষেপ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। 

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বাড়তি ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়ে দেওয়া চিঠিতে ওই প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। 

চিঠিতে জাতীয় করনীতি গ্রহণ, এ-চালান পদ্ধতির বাস্তবায়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করা, সুরক্ষিত লেনদেন আইন প্রণয়ন এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণ করাসহ অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়েছে। 

এসব সংস্কার দেশকে টেকসই উন্নয়নের সঠিক পথে রাখতে সরকারের গভীর অঙ্গীকারের বহি:প্রকাশ বলে এতে জানানো হয়। 

এর আগে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহায়তা সংস্থা থেকে ১৭০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫৯ কোটি ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০৯ কোটি ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল।