এ ইপিজেডে ১৫৩ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার পাশাপাশি বছরে প্রায় ১৮৪ কোটি ডলারের রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে বেপজার।
Published : 05 Jul 2023, 08:54 AM
পদ্মাসেতুর কল্যাণে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ তৈরি হওয়ায় ওই অঞ্চলে বড় শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে চায় সরকার।
সেই লক্ষ্যে ‘পটুয়াখালী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তাবনা আকারে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেপজা।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে।
জানতে চাইলে বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি দেশের বিভিন্ন ইপিজেড এ ব্যবসা করছেন, তারা বিভিন্ন সময় উন্নত যোগাযাগ ব্যবস্থা স্থাপিত হলে ওই অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন।
“পদ্মাসেতু দিয়ে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর আমরা বাংলাদেশে ব্যবসারত বিদেশি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে ওই অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখেছি। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছি।”
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া মৌজার প্রায় ৪১১ একর এবং কুয়াকাটা মৌজার ৭ একরসহ মোট ৪১৮ একর জমিতে এই ইপিজেড হবে, যেখানে ৩০৬টি শিল্প প্লট তৈরি করা যাবে।
নদীবেষ্টিত পটুয়াখালীতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি প্রায় ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং ১৫৩ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার পাশাপাশি বছরে প্রায় ১৮৪ কোটি ডলারের রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে বেপজার।
বেপজা কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। শিগগির পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি বিভাগের প্রাথমিক মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উঠতে পারে।
“পিইসি সভার অনুমোদন নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন নিয়ে আমরা এ বছরের মধ্যেই কাজ শুরু করতে চাই।”
দেশের প্রস্তাবিত নবম এই ইপিজেড সফল হবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ইপিজেডে মূলত সরাসরি বিদেশে রপ্তানির শিল্প স্থাপন করা হয়। এসব অঞ্চল থেকে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি রপ্তানি করা হয়। তাই সমুদ্র বন্দরের কাছেই বেশিরভাগ ইপিজেড গড়ে ওঠে, যাতে খুব সহজেই পণ্য জাহাজীকরণ করা সম্ভব হয়।
“প্রস্তাবিত পটুয়াখালী ইপিজেডের পাশেই রয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং স্বল্প দূরত্বে রয়েছে আরেক সমুদ্র বন্দর মোংলা। পদ্মাসেতু দিয়ে বিশ্বমানের সড়ক যোগাযোগের পর রেল পরিবহনও উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি আমরা। শিগগির রেললাইন উদ্বোধন হয়ে যাবে। সুতরাং এই ইপিজেড বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলে আমি মনে করি।”
প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেপজার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা যোগান দেওয়া হবে। বাকি ১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রকল্পে সরাসরি ১ লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে আরও ২ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
প্রকল্পের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে অর্থ বিভাগের সঙ্গে ২ শতাংশ সুদে সরকারি কোষাগার থেকে ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে এখন আটটি ইপিজেড রয়েছে। ১৯৮৩ সালে দেশের প্রথম ইপিজেড স্থাপন করা হয় চট্টগ্রামে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও সাতটি ইপিজেড গড়ে উঠেছে।
ঢাকা, মংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী ও নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের পাশাপাশি আদমজী জুট মিলস এবং চট্টগ্রাম স্টিল মিলস এলাকায় দুটি ইপিজেড রয়েছে।