“মানুষের বয়স যেমন বাড়ে বছর বছর বাজেটের আকারও তেমন বাড়ছে। তাই বাজেটের আকার বাড়ায় কৃতিত্ব নেই”, বলেন দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
Published : 09 Jun 2024, 11:48 PM
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে ক্রয় চুক্তিতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দিয়ে ‘নো প্রোডাকশন, নো চার্জ’ বিধান যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ।
আগামী অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনায় রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সভায় এই দাবি জানানো হয়েছে।
সভায় প্রস্তাবিত বাজেটের বেশি কিছু সমালোচনা করা হয়, কিছু প্রস্তাব সংশোধনের দাবিও করা হয়।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার দলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণে জিডিপির ২ শতাংশ ও জাতীয় বাজেটের ৮ শতাংশ বরাদ্দ এবং মোবাইল ফোনের টকটাইম-ইন্টারনেট ডাটার ওপর শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করার দাবিও জানান।
তিনি বলেন, "উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানে আতঙ্ক। সাধারণ মানুষ কোন জিনিসের দাম কতটুকু বাড়বে, তাদের জীবনযাপন ব্যয় কতটুকু বাড়বে, এগুলো নিয়ে চিন্তিত।"
সভায় সরকারের আর্থিক নীতির কঠোর সমালোচক অর্থনীতির গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির গবেষণা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনও যোগ দেন।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মনে করেন অর্থমন্ত্রী ‘গতানুগতিক বাজেট’ দিয়েছেন। তিনি ধনী ও সামর্থ্যবানদের করের জালে এনে মূল্যস্ফীতি রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের শরিক দলটির সভাপতি বলেন, “মানুষের বয়স যেমন বাড়ে বছর বছর বাজেটের আকারও তেমন বাড়ছে। তাই বাজেটের আকার বাড়ায় কৃতিত্ব নেই। তাই এবারের বাজেট গতানুগতিক বাজেট।”
নৌকা নিয়ে জিতে গত তিনটি সংসদের সদস্য ছিলেন ইনু। শিরীন আখতার ছিলেন দুটি সংসদের সদস্য। এবার নৌকা নিয়েও কুষ্টিয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে হেরেছেন ইনু। জোটের মনোনয়ন না পেয়ে ফেনী-১ আসনে ভোটেই দাঁড়াননি শিরীন।
ইনু বলেন, "ধনী ও সামর্থ্যবানদের করের জালে আনুন, মূল্যস্ফীতি রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিন।… দাগী ঋণখেলাপিদের বিশেষ ট্রাইবুনালে নিয়ে তড়িঘড়ি করে খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা নিতে হবে।"
উপজেলায় রাজস্ব অফিস স্থাপন করে ইউনিয়নের গ্রোথ সেন্টার, ইউনিয়নের স্থায়ী দোকানদার বা ব্যবসায়ীদের কর জালে এনে লাখো কোটি টাকা রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব বলেও মত দেন তিনি।
বাজারে নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্য, ডলার সংকট, সুদের হারের ‘গন্ডগোল’, ব্যাংকের বিশৃঙ্খলা, রাজস্ব আদায়ে ‘ধীরগতি’ এবং সমগ্র অর্থনীতিতে ‘অনাস্থার ভাব’, সব কিছু মিলিয়ে একটা অর্থনৈতিক সংকটকাল পার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জাসদ সভাপতি।
তিনি বলেন, "এসব ধাক্কা সামলানোর বাজেট আমরা আশা করেছিলাম। এই বাজেটে অর্থমন্ত্রী সব সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু এর কোনোও সমাধান নেই। বাজেটে বরাদ্দের হেরফের আছে কিন্তু ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জন্য ক্রাইসিস স্টেপ নেই।”
আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে ‘তালেবানি শাসন চাওয়ার রাজনীতি’ চলে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে তালেবানি মিছিল বন্ধ করতে হবে।"
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, "এখন আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের অনেক মুদি দোকানেও বছরে কোটি টাকার লেনদেন হয়। তাই আমাদের এখন উপজেলা পর্যায়ের কর অফিসগুলো নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন এসেছে।”
বাজার ব্যবস্থার সংশোধন ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না মত দিয়ে তিনি বলেন, “তাই আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য আরও ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন।"