সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রকল্পগুলোতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
Published : 11 Jun 2024, 10:04 PM
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চারটি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হয়েছে গড়ে ২৬ দশমিক ১২ শতাংশ।
মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব ‘ভেরিয়েশন প্রস্তাব’ অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
ভেরিয়েশন প্রস্তাব হল- চলমান কোনো প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি বা কমানোর প্রস্তাব।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ প্রকল্পের ভেরিয়েশন খরচ বাড়ার তথ্য দেন।
বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মোট ১৫টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, ভেরিয়েশনের সর্বোচ্চ সীমা অর্থাৎ চলমান প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি করা যায় সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ।
এ দিন ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে একটি প্রকল্পে ৪৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং আরেকটি প্রকল্পের ৪৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের আলোচ্য সূচি থেকে জানা যাচ্ছে, ‘সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা অংশের নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউডি-০২ এর মূল চূক্তিমূল্য ছিল ১৫১ কোটি ২২ লাখ ৭৮ হাজার ৫৫৬ টাকা। এখানে ব্যয় ৭৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯১ টাকা বা (৪৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ) বাড়িয়ে ২২৪ কোটি ৮০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪৭ টাকা করা হয়েছে। এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স, জন্মভূমি নির্মাতা ও ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী কনস্ট্রাকশন কাজটি বাস্তবায়ন করছে ।
একই প্রকল্পে ডব্লিউডি-০৩ প্যাকেজের মূল চুক্তিমূল্য ছিল ৮৬ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ৬৬২ টাকা, যেখানে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। মোজাহার এন্টারপ্রাইজ, রানা বিল্ডার্স ও জন্মভূমি নির্মাতা এই তিন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজটি বাস্তবায়ন করছে।
‘ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক (এন১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ) এর চার বছরের জন্য পারফরমেন্স বেইজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ (প্রথম সংশোধনী)’ প্রকল্পে প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউপি-০১ এর মূল চুক্তিমূল্য ছিল ২৯০ কোটি ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৫ টাকা। এখানে খরচ ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৩২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পেয়েছে তাহের ব্রাদার্স।
একই প্রকল্পে নির্মাণ কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেডকে দেওয়া ডব্লিউপি-০২ প্যাকেজের মূল চুক্তিমূল্য ছিল ৫৫৬ কোটি ৫৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৩ টাকা। এখানে খরচ ৭৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৩১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
জননিরাপত্তা বিভাগের বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম স্থাপনে ডিজাইন, সাপ্লাই, ইনস্টেলেশন টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিং কাজের জন্য মূল চুক্তিমূল্য ১২৯ কোটি ২২ লাখ ৬০৭৬৩ টাকা। সংশোধিত চুক্তিমূল্য ১৪২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৯ হাজার ১৮১ টাকা, যা মূল চুক্তিমূল্য থেকে ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। স্মার্ট টেকনলজিস, ডিজকন টেকনলজিস লিমিটেড যৌথভাবে কাজটি পেয়েছে।
ছয় মাসের জ্বালানি তেলের প্রিমিয়াম ১৩ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, আগামী জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিশ্ববাজার থেকে জ্বালানি তেল কেনার জন্য সিঙ্গাপুরের দুটি কোম্পানিকে নির্বাচন করেছে ক্রয় কমিটি।
ফলে আগামী ছয় মাসে বিশ্ববাজার থেকে যত ধরনের জ্বালানি তেল কেনা হবে, তা পরিবহনের দায়িত্বে থাকবে ইউনিপ্যাক সিঙ্গাপুর ও ভিটল এশিয়া।
প্রতিবছর সরকারিভাবে প্রায় ৬০ লাখ টন জ্বালানি তেল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মাহমুদুল হোসাইন বলেন, জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ সালের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে জ্বালানি তেল আনা হবে এর জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ইউনিপ্যাক সিঙ্গাপুর লিমিটেড ও ভিটল এশিয়াকে নির্বাচন করা হয়েছে। ক্রয় কমিটি এ প্রক্রিয়া অনুমোদনের সুপারিশ করেছে।
“জ্বালানি তেলের দাম ঠিক হয় পণ্য যে দিন জাহাজিকরণ হয় তার আগের দুই দিন, জাহাজিকরণের দিন এবং পরের দুই দিন আন্তর্জাতিক বাজারে যে দামটা হয়, সেগুলো গড় করে। আর সমঝোতা বা দরকষাকষির জায়গা থাকে প্রিমিয়াম নিয়ে। শিপিং ভাড়াসহ বাংলাদেশের বন্দরে আনলোড হওয়া পর্যন্ত যে খরচটা হয় সেটা হচ্ছে প্রিমিয়াম। মোট পাঁচটি প্যাকেজে ধাপে ধাপে তেল আনা হবে।
“এর মধ্যে ‘প্যাকেজ-এ’ এবং ‘প্যাকেজ-ই’ এর সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে ইউনিপ্যাক সিঙ্গাপুর লিমিটেড। আর প্যাকেজ বি, সি ও ডি এর জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে ভিটল এশিয়া। গ্যাসওয়েল, জেট-১, ফার্নেস অয়েল, মোবাস ও মেরিন ফুয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল এই সময়ে কেনা হবে। প্রিমিয়াম বাবদ মোট খরচ হবে ১৩ হাজার ৮৭৬ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা।”