নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার খলিসাখালি গ্রামের বাসিন্দা কাজী আল মামুনের (৩৫) সাবেক স্ত্রীর খালু হলেন মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা।
Published : 09 Aug 2023, 06:19 PM
মিতু হত্যার পর মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা এক লাখ টাকা তার আত্মীয় কাজী আল মামুনের মাধ্যমে লেনদেন করেছিলেন।
বুধবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে এ তথ্য দিয়েছেন মামুন।
নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার খলিসাখালি গ্রামের বাসিন্দা কাজী আল মামুনের (৩৫) সাবেক স্ত্রীর খালু হলেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা।
কাজী আল মামুন নিজ গ্রামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন এবং ‘দৈনিক বাংলাদেশের আলো’ নামের একটি পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি।
আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে কাজী আল মামুন বলেন, “কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা আমার সাবেক স্ত্রী আবেদা জান্নাত মিম এর আপন খালু। আত্মীয়তার সুবাদে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে মুছা স্বপরিবারে আমাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। তখনই মুছার সাথে আমার প্রথম দেখা ও পরিচয়।
“সেই সুবাদে মাঝে মাঝে মুছা আমার দুটি এবং আমার স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে ফোন করতেন।”
তিনি বলেন, “২০১৬ সালের জুন মাসের শুরুর দিকে মুছার মোবাইল, যার শেষ দুই ডিজিট ৯১, সেটি থেকে আমাকে ফোন দেন। ফোন করে আঙ্কেল (মুছা) বলেন, তোমার নম্বর বিকাশ আছে? আমি বলি, আমার দুটি নম্বরই বিকাশ করা। আমি পাল্টা জানতে চাই, আঙ্কেল আমার বিকাশ নম্বর কেন চাচ্ছেন। তখন তিনি বলেন, আমার এসপি স্যারের এক লোক আমাকে কিছু টাকা পাঠাবে।
“তখন আমি আবার বলি, আপনার টাকা আমার কাছে কেন পাঠাবেন? তখন তিনি (মুছা) বলেন, আমি চিটাগাং এ নাই, বাইরে আছি। তিনি বলেন, তুমি ক্যাশ করে রাখিও। আমার কোনো লোক পরে পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করলে (বিকাশ নম্বর দিলে) তুমি টাকাগুলো বিকাশ করে দিও।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কাজী আল মামুন আদালতে বলেন, “এরপরে সম্ভবত ২০১৬ সালের ১০ জুন তারিখে সন্ধ্যার দিকে আমাকে ফোন করা হয়। মোবাইল নম্বরটির শেষ দুই ডিজিট সম্ভবত ৩১। ফোন করে এক লোক বলেন, আমি মুছাকে চিনি কিনা? তখন আমি বলি, হ্যাঁ মুছা আমার আত্মীয়, তাকে আমি চিনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কে? তখন তিনি বলেন, আমি মুছা এবং এসপি বাবুল আক্তার স্যারের পরিচিত লোক।”
মামুন বলেন, “তিনি (টেলিফোন করা ব্যক্তি) বলেন, মুছা আপনার কাছে কিছু টাকা পাঠাতে বলেছে, আপনার বিকাশ নম্বর দেন। তখন আমি নিজের দুটো ফোন নম্বর তাকে দিই। উনি বলেন, দুটো নম্বরে তো ২৫ হাজার করে মোট ৫০ হাজার টাকা যাবে। আমি আপনাকে টাকা পাঠাব এক লাখের মত। আপনি আরো একটি নম্বর দেন। পরে আমার বন্ধু মোস্তাইনের দোকান আছে (বিকাশ এজেন্ট), তার নম্বরটি দিই। সেই নম্বরটি এখন মনে নেই।
“কিছু সময় পরে, আমার দুটি নম্বরে ২৫ হাজার করে মোট ৫০ হাজার এবং মোস্তাইনের বিকাশ এজেন্ট নম্বরে ৪৯ হাজার টাকা আসে। দোকানের নম্বরে আসা টাকাটা আমি ক্যাশ করে নিয়ে যাই। আমার দুটি নম্বরে থাকা টাকা মোবাইলেই থাকে।”
কাজী আল মামুন বলেন, “এর দুই দিন পরে এক লোক মুছার রেফারেন্স দিয়ে বলে আমি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে বলছি। নাম বলেছিল, এ মুহূর্তে স্মরণ নাই। তিনি বলেন, তোমার কাছে যে টাকাগুলো পাঠিয়েছিল তা পাঠিয়ে দাও।
“কয়টা ফোন নম্বর দিয়েছিল এখন তা মনে নেই। আমার নিজের মোবাইলে যে টাকাগুলো ছিল সেগুলো ট্রান্সফার করে দিই। আর নগদ টাকা থেকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা মোস্তাইনের দোকান থেকে আরেকটি ফোন নম্বরে বিকাশ করে পাঠিয়ে দিই। অবশিষ্ট ৩১ হাজারের কিছু বেশি টাকা (ওইদিন বা পরের দিন) আরেকটি নম্বর দিলে সেটিতে পাঠিয়ে দিই।”
আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে কাজী আল মামুন বলেন, “পরে ২০২১ সালের ১০ মে আমাকে পিবিআই গ্রামের বাসা থেকে নিয়ে আসে। যশোর পিবিআই অফিসের একজন কর্মকর্তা (স্নেহাশীষ) ফোন দেন। তখন আমি কোচিং এ পড়াচ্ছিলাম। তারপর তিনি আমাকে নিয়ে আসেন, তারপর বলেন সন্তোষ স্যার কথা বলবেন।
“ফোনে আমাকে সন্তোষ কুমার চাকমার (মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা) সাথে কথা বলিয়ে দেন। সন্তোষ স্যার বলেন, একটা মামলার বিষয়ে তথ্য নেয়ার আছে, চট্টগ্রামে যেতে হবে। যশোরের পিবিআই কর্মকর্তারা আমাকে ঘাটিয়াপাড়া (মধুমতী নদীর তীরে) পর্যন্ত এনে দেয়। সেখান থেকে ঢাকা হয়ে পিবিআইর সহায়তায় চট্টগ্রাম পিবিআইতে আসি ১০ মে ২০২১ তারিখে।”
বুধবার আদালতে যা বলেছেন, সন্তোষ কুমার চাকমার কাছেও সেদিন এসব কথা বলেছিলেন বলে জানান কাজী আল মামুন।
তিনি বলেন, “তখন আমার কাছে যে মোবাইল সেট দুটি ছিল, যার একটি আমার এবং অন্যটি আমার বর্তমান স্ত্রীর, সেই দুটি মোবাইল সেট সিমসহ জব্দ করে। আমি জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি। পরবর্তীতে ১১ মে ২০২১ ম্যাজিস্ট্রেট মো সফিউদ্দিনের কক্ষে আমি জবানবন্দি দিই।”
আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে কাজী আল মামুন বলেন, “আমি বাবুল আক্তারকে চিনি না। কখনো দেখিনি।”
পরে বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন তাকে জেরা করেন।
এর আগে বুধবার সকালে আগের দিনের সাক্ষী সাইফুল হককে জেরা করেন বাবুলের আইনজীবীরা।