এ উড়াল সড়কে থাকছে ১৫টি র্যাম্প। এগুলোর কোনোটির কাজে হাত দেওয়া যায়নি এখনও।
Published : 16 Jan 2024, 12:19 AM
চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য আগামী মার্চে খুলে দেওয়া হলেও এর পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে সময় লেগে যাবে আরও বছর দেড়েক। কারণ, এক্সপ্রেসওয়েতে উঠানামার সব পথ বা র্যাম্পের কাজে হাতই দেওয়া যায়নি। সেগুলোর কাজ শেষ হতে হতে ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে গিয়ে ঠেকবে।
মার্চে যান চলাচল উন্মুক্ত হলে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে চলাচল করতে দিতে হবে টোল। তবে কোন যানবাহনের জন্য কত টাকা দিতে হবে, তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। টোল প্লাজা নির্মাণও শেষ হয়নি।
চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এ উড়াল সড়ক গত ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেদিন কিছু সময়ের জন্য বিমানবন্দর থেকে টাইগারপাস অংশে যান চলাচল করলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর মাস দুয়েক সময়ে বাকি থাকা কিছু কাজ শেষ করা হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু টাইগার পাস থেকে লালখান বাজার অংশের কাজ বাকি আছে। সেটা চলছে। সেটা শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে।”
এর আগেই টোল আদায়ের জন্য টোল বক্সসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কাজ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।
টোলের হার এখনো নির্ধারণ করা হয়নি জানিয়ে মাহফুজুর বলেন, “এ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাব। অনুমোদন হলে সেই অনুসারে আদায় করা হবে।”
২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার সময় ঠিক করা হয়েছিল।
তবে কাজ শুরু হতেই দেরি হয়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।
পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
তবে মেয়াদ আরো বাড়তে যাচ্ছে প্রকল্পটির।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, “২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সবগুলো র্যাম্পের কাজ শেষ করতে চাই। এক বছর সময় বাড়ানোর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের আবেদন করব। সেই সময় পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমরাই দেখাশোনা করব। কারণ প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা হস্তান্তর করা যায় না।”
র্যাম্প কোথায় কোথায়
এক্সপ্রেসওয়েতে উঠানামার জন্য র্যাম্প রাখা হয়েছে ১৫টি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চারটি থাকছে আগ্রাবাদে। সেগুলোর মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হবে দুটি।
টাইগারপাস, নিমতলা, সিইপিজেড ও কেইপিজেড এলাকায় র্যাম্প থাকছে দুটি করে।
জিইসি মোড়ে হোটেল পেনিনসুলা, ফকিরহাটে ও সিমেনস ক্রসিং এলাকায় থাকছে একটি করে র্যাম্প।
প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, “গত ৪ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনে গিয়ে আমরা অবহিত করেছি। র্যাম্পগুলোর এলাইনমেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এজন্য কোন কোন ইউলিটি লাইন স্থানান্তর করতে হবে, সেটা মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি।”
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “র্যাম্পের ক্ষেত্রে খুব বেশি ফাউন্ডেশনের (ভিত্তি স্থাপন) বিষয় নেই। তাই ইউটিলিটি লাইন সরাতে হলেও তা বেশি হবে না।
“আমরা বলেছি, যেহেতু মূল কাঠামোর কাজ শেষ তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের সড়ক মেরামত করে, লেইন মার্কিং ও জেব্রা ক্রসিং দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিতে। তাতে তারা সম্মত হয়েছে। আর লালখান বাজার মোড়ে একটি চর্তুমুখী ফুটওভার ব্রিজ করে দিতে অনুরোধ করেছি। সেটা তারা করে দেবেন।”
এক্সপ্রেসওয়ে চালু করে পরে র্যাম্পের কাজে হাত দেওয়ার সমালোচনা করেছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উদ্বোধনের পরও যদি যানবাহন চলাচল না করে তাহলে সেটা উদ্বোধন কীভাবে হল? প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের উচিত ছিল প্রকল্প সংশোধনের সময় চূড়ান্ত করা, কখন এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।”
১৬ কিলোমিটার উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেক বিল্ডিং- চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।
কাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি, কোভিডের সময় কাজে ধীরগতি, বিকল্প সড়ক চালু করতে দেরি এবং সবশেষ বন্দর সংলগ্ন এলাকায় নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে এই উড়াল সড়কের কাজে দেরি হয়েছে।