চট্টগ্রামে তিন দিন আগে সড়কের পাশ থেকে কায়েস নামের পুলিশের যে ‘সোর্সের’ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাকে মাদক কারবারের দ্বন্দ্বে আরেক ‘সোর্স’ খুন করে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সোমবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ছয় জনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশ এ তথ্য জানায়।
গ্রেপ্তার ছয় জন হলেন- হুমায়ুন কবির ওরফে মাসুদ তালুকদার (৪৫), মো. খোকন ওরফে সোনা মিয়া (৩১), রফিকুজ্জামান সানি ওরফে আফরান (২২), নজরুল ইসলাম (২৩), মো. রায়হান (২১) ও আব্দুল কাদের জীবন (২২)।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নিহত কায়েস ও গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবির দুই জনই আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ‘সোর্স’ (তথ্যদাতা) হিসেবে কাজ করতেন।
খুনের কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, “চার মাস আগে তারা আইস (মাদক) কিনতে রাঙামাটিতে পাহাড়ি এক ব্যক্তির কাছে যায়। পরবর্তীতে ওই মাদক কারবারিদের হাতে মারধরের শিকার হয় হুমায়ুন। সেখান থেকেই মূলত তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ দ্বন্দ্বের জেরে হুমায়ুন তিন মাস ধরে কায়েসকে খুন করার পরিকল্পনা করছিল। অবশেষে গত ২০ জানুয়ারি পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে খুন করা হয় কায়েসকে।”
গত ২১ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকায় সড়ক থেকে পাশে মোহাম্মদ কায়েসের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
লাশ উদ্ধারের পর কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ জানিয়েছিলেন, “কায়েসের পেটে, বুকে ধারালো অস্ত্রের ছয় থেকে সাতটি আঘাতের চিহ্ন আছে। তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কিছুই খোয়া যায়নি।”
নিহত কায়েস আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন ওসি দুলাল মাহমুদ।
সিএমপির ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কায়সার হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কায়েস ও হুমায়ুন রাঙামাটিতে মাদক কিনতে যাওয়ার দুই-একদিন পর সেই মাদক কারবারীরা হুমায়ুনকে মাদক দেখতে আবার রাঙামাটিতে যেতে বলে। ওইদিন হুমায়ুনকে তারা ‘পুলিশের সোর্স সন্দেহে’ বেদম মারধর করে। যেখান থেকে সে প্রাণে বেঁচে যায়।
“নিহত কায়েস মাদক কারবারিদের কাছে হুমায়ুনকে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বলে সন্দেহ ছিল তার। তখন থেকেই মূলত সে কায়েসকে খুন করার পরিকল্পনা করে।”
পুলিশ জানায়, তিন মাস ধরে হুমায়ুন নিহত কায়েসের সাথে সখ্য বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে তাকে ডেকে এনে খুন করার পরিকল্পনা করলেও কায়েস কখনও একা তার সঙ্গে দেখা করতেন না। যার কারণে কয়েকবার পরিকল্পনা করেও হুমায়ুন মারতে পারেনি কায়েসকে। যার কারণে হুমায়ুন তার অন্য এক বন্ধুর সঙ্গে কায়েসকে খুন করার বিষয়ে পরামর্শ করে এবং এক লাখ টাকার চুক্তি করে।
হুমায়ুনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে উপ-কমিশনার আলী হোসেন জানান, “গত ২০ জানুয়ারি বিকালে কায়েসকে ফোন করে বাসা থেকে ডেকে আনে। কিছুক্ষণ একসঙ্গে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যা নামার পর দুইজন একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকায় গিয়ে দাঁড়ায়।
“এ সময় কায়েসকে অটোরিকশায় রেখে হুমায়ুন মইজ্জ্যারটেক এলাকায় যায়। আরেকটি সিএনজি অটোরিকশা করে সে তার অন্য বন্ধু ও তার সহযোগীদের নিয়ে আবার কায়েস যে স্থানে ছিলেন সেখানে যায়। তারা ছুরি ও ভোমর দিয়ে অটো রিকশার দুই পাশ থেকে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে কায়েস নিজের জীবন রক্ষা করতে আবাসিক এলাকার ড্রেনের দিকে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। হামলাকারীরা সেখানে গিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।”
গ্রেপ্তার ছয়জন ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও কয়েকজন আছে এবং তাদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা আলী হোসেন।
আরও খবর