তবে ওই ঘটনায় দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়ার কথা বলছে পুলিশ।
Published : 06 Apr 2023, 09:37 PM
‘পাহাড়ে মাটি কাটার খবর প্রকাশের জেরে’ দোতলা থেকে নিচে ফেলে আহত করার অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশের এক সাংবাদিক।
দুইদিন আগের ওই ঘটনায় সেই সাংবাদিকের পাঁজরের তিনটি হাড় ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় একটি মামলা করেছেন।
আইয়ুব মিয়াজী (৩৪) নামের ওই সাংবাদিক বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দোতলা থেকে তার পড়ার ঘটনার একটি সিসিটিভি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, নাকি নিজেই লাফ দিয়েছেন এ বিষয়ে সন্দিহান থানা পুলিশ।
আইয়ুব মিয়াজী জনবানী, পূর্বতারা, দি ক্রাইম চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। দোহাজারী পৌরসভা এলাকায় আর কে প্লাজার দোতলায় একটি কম্পিউটার ট্রেনিং ইন্সটিটিউটও রয়েছে তার।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেখান থেকেই তাকে মারধরের পর ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
চন্দনাইশ উপজেলার জামিজজুরি ইউনিয়নের উত্তর জামিজজুরি আদর্শ গ্রাম, পূর্ব জামিজজুরি আনসার আলী পাড়া ও জঙ্গল জামিজজুরি এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির ঘটনার সংবাদ প্রকাশ এবং এর জেরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে আইয়ুবের ভাষ্য।
বৃহস্পতিবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামিজজুরি ইউনিয়নে পাহাড় ও মাটি কাটা নিয়ে জনবাণী পত্রিকায় ১০-১২ দিন আগে তার একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর উপজেলা প্রশাসন সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে।
“এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন তরুণ এসে আমার প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তারা আমাকে প্রথমে দা দিয়ে কোপ মারার চেষ্টা করে, লোহার বাটাম দিয়ে বুকে আঘাত করে। এক পর্যায়ে দোতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়।”
আইয়ুবের দাবি, হামলাকারীরা তার অফিসে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোন, চারটি ল্যাপটপ নিয়ে গেছে এবং তার ট্রেনিং সেন্টারের পাঁচটি কম্পিউটার ভাঙচুর করেছে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে দোহাজারী হাসপাতাল এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, “স্থানীয় প্রভাবশালী আলাউদ্দিনের নেতৃত্বেই এ হামলা করা হয়েছে। মাটি কাটা বন্ধ হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হত্যা করতেই হামলা করা হয়েছে।”
তার ভাষ্য, গত দুইমাস ধরে জামিজজুরি এলাকায় ব্যক্তিগত, সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড়ে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছিল। স্থানীয় প্রভাবশালীরা টোকেন দিয়ে ওই এলাকার পাহাড়ে মাটি কাটার কাজ করছিল। সংবাদ প্রকাশর পর বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।
হামলার ঘটনার পর ওইদিন গভীর রাতে আইয়ুব মিয়াজীর বাবা আবদুস শুক্কুর বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় একটি মামলা করেন।
চন্দনাইশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই সাংবাদিক মাটি কাটা নিয়ে সংবাদ করার পর আমাদের জানিয়েছিল। গত শুক্র ও মঙ্গলবারে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালায়। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।”
পাহাড় ও মাটি কাটা নিয়ে সংবাদ করার জেরে এ ঘটনা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হামলার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তদন্তের পর আসল ঘটনা জানা যাবে।”
ওই এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধে জোরালো ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই সাংবাদিকের বাবা একটি মামলা করেছেন। তবে হামলার বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্য রয়েছে।
“আমরা হামলার ঘটনা শুনেছি। আবার এও বলা হচ্ছে, ওই লোকজন গিয়েছিল অন্য বিরোধের কারণে। মারধর থেকে বাঁচতে ওই সাংবাদিক লাফিয়ে পড়েছিল। আসলে কী ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
যে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আইয়ুবের অভিযোগ, তার বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।