চট্টগ্রামে উল্লুক পাচার, দুজনের জেলজরিমানা

এটি ওয়েস্টার্ন হোলক গিবন বা পশ্চিমা উল্লুক প্রজাতির একটি পুরুষ উল্লুক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2022, 06:47 AM
Updated : 8 Oct 2022, 06:47 AM

পাচারের সময় বিপন্ন প্রজাতির একটি উল্লুকসহ চুনতি অভয়ারণ্য থেকে গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তিকে ১৩ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বান্দরবানের আলীকদম থেকে ধরে আনা উল্লুকটি চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে নিয়ে যাচ্ছিল পাচারকারীরা।

পথে শনিবার সকালে চুনতি অভয়ারণ্যের ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মার্শা পরিবহনের একটি বাস থেকে উল্লুকটিসহ ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

লোহাগাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি উল্লুক উদ্ধার ও দুই পাচারকারীকে আমরা আটক করেছি।”

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী লোহাগাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অপরাধ স্বীকার করায় আইন অনুযায়ী তাদের প্রত্যেককে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।”

দণ্ডিতরা হলেন, কুমিল্লার দেবীদ্বারের ফতেয়াবাদ গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে মো. মুবিন (৩০) এবং দাউদকান্দির মাজহারুল (৩৫)। তারা রিয়াজুদ্দিন বাজারের নাইস বার্ড গার্ডেন নামের একটি দোকানের কর্মচারী।

বণ্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ৩৪(খ) ধারা অনুযায়ী এভাবে বণ্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয় এবং আমদানি-রপ্তানি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানান চুনতি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রেপ্তার দুজন বলেছে, তারা চকরিয়া থেকে উল্লুকটি নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারে যাচ্ছিল। সেখানে পাখির দোকানে রেখে সেটি বিক্রি করত।

“আলীকদম থেকে একটি চক্র তাদের এই উল্লুকটি এনে দেয়। সেটি তারা কিনে নিয়েছে জানালেও কত টাকায় কিনেছে তা বলেনি।”

উদ্ধার হওয়া প্রাণীটির বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি ওয়েস্টার্ন হোলক গিবন বা পশ্চিমা উল্লুক প্রজাতির একটি পুরুষ উল্লুক। বয়স খুব বেশি নয়।”

আগে চুনতি অভয়ারণ্যে উল্লুক থাকলেও এখন আর এই প্রাণীর দেখা মেলে না বলে ভাষ্য এ বন কর্মকর্তার।

উল্লুকটিকে ডুলহাজারা সাফারি পার্কে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে মাহমুদ হোসেন বলেন, “সেখানে ডাক্তাররা আগে প্রাণীটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। পরে সেটি সাফারি পার্কে রাখা হবে নাকি আলীকদমের বনে ছাড়া হবে- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

সাম্প্রতিককালে পাচারকারীদের হাত থেকে কোনো উল্লুক উদ্ধারের ঘটনা চট্টগ্রামে এটিই প্রথম।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও উল্লুক নিয়ে গবেষণাকারী অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চুনতি অভায়রণ্যে এখন আর উল্লুক না থাকলেও আলীকদমের দিকে এখনও কিছু আছে।

“তাও সংখ্যায় কম। একসময় চট্টগ্রামের হাজারিখিল বনেও এরা ছিল। মূলত আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে উল্লুক বিপন্ন হয়ে পরেছে। এরা গাছে গাছে থাকে। গাছ কেটে ফেলা হলে এরা এক গাছ থেকে আরেক গাছে যেতে পারে না। তখন মাটিতে নামে।”

মাটিতে নামলে উল্লুক শিয়াল ও কুকুরের হামলার শিকার হয় জানিয়ে গবেষক ড. মো. ফরিদ আহসান বলেন, “সারাদেশের মধ্যে সিলেটের লাউয়াছড়াসহ কয়েকটি বনে এবং চট্টগ্রামের দুয়েকটি বনে এখনও উল্লুক আছে। এর মোট সংখ্যা হবে ৩০০ এর মতো।

“পাচারকালে একটি উল্লুক উদ্ধার হওয়া তাই সুখবর। এরা খুবই বিপন্ন।”

অধ্যাপক ফরিদ জানান, উল্লুক ছোট অবস্থায় একটু ধুসর রঙের হয়। এক দেড় বছর বয়সে কালো হয়। ছয় থেকে আট বছর বয়সে পুরুষ উল্লুক কালোই থেকে যায়। স্ত্রী উল্লুক ধুসর রঙের হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) তালিকা অনুসারে উল্লুক লাল তালিকাভুক্ত বিপন্ন প্রাণী।

অধ্যাপক ফরিদ জানান, মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চিন্দুইন নদীর পশ্চিম পাশে এই উল্লুকের আবাস বলে এর নাম ওয়েস্টার্ন হোলক গিবন বা পশ্চিমা উল্লুক। বাংলাদেশে এই প্রজাতির উল্লুকই আছে।  

উল্লুকের বসবাস মূলত বড় গাছের মগডালে। লাফিয়ে এক গাছ ডাল ধরে থেকে অন্য গাছে তাদের যাতায়াত। ফল, ফুল, কচি পাতা ও পোকামাকড় এদের খাবার। একটি দলে দুই থেকে পাঁচটি উল্লুক থাকে।

আর শারীরিক বৈশিষ্ট্য হল উল্লুক লেজহীন, এদের হাত পায়ের চেয়ে লম্বা। উল্লুক সাধারণত দিনের বেলায় চলাফেরা করে।