“কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। তদন্তের পর বলা যাবে কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে।“
Published : 05 Mar 2023, 02:48 PM
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ২০ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেছেন সীমা গ্রুপের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম।
রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের জেরার মুখে পড়েন তিনি।
সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের ফায়ার লাইসেন্সসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সবকিছুই ‘আপডেটেড' ছিল। এরপরও কেন বিস্ফোরণ হল, সেই কারণ তারা ‘খুঁজে পাচ্ছেন না’।
ব্যবস্থাপক আলীমের ভাষ্য, “কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। তদন্তের পর বলা যাবে কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে।“
বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “হতাহতদের কোম্পানির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশাসনও করছে, তাদের সাথে সমন্বয় করে যা যা করার, সব করা হবে।”
ঘটনাস্থলে কোম্পানির সুপারভাইজার মো. সানাউল্লাহ জানান, সীমা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি অক্সিজেন কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে অক্সি অক্সিজেনের তিনটি এবং সীমা অক্সিজেন কোম্পানির দুটিসহ মোট পাঁচটি প্ল্যান্ট আছে। তবে অক্সি অক্সিজেনের তিনটি প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। আর শনিবারের বিস্ফোরণে সীমা অক্সিজেনের দুটি প্লান্ট ধ্বংস হয়ে গেছে।
এখন জাহাজ কাটার কাজ কমে যাওয়ায় অক্সিজেন উৎপাদন কমায় কারখানায় শ্রমিকও কম ছিল বলে জানান সানাউল্লাহ।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, উৎপাদন কম হওয়ায় এখন শ্রমিকও কম। শুক্রবার ওই কারখানা বন্ধ ছিল, পরদিন শনিবার সকালে চালু করা হয়। বিকালের শিফটে বিস্ফোরণের সময় ছয়জন কাজে ছিলেন, কিন্তু নামাজের জন্য তিনজন আগেই বের হয়ে গিয়েছিলেন।
দুর্ঘটনাকবলিত প্ল্যান্টটিতে উৎপাদন করা হত অক্সি-এসিটিলিন গ্যাস। এটি মূলত শিল্পে ব্যবহার করা অক্সিজেনের প্ল্যান্ট। অক্সি-এসিটিলিন গ্যাসের শিখা দিয়ে লোহার পাত কাটা হয়। একই সঙ্গে রি রোলিং মিলে লোহা গলাতে ব্যবহার করা হয়।
আশপাশের জাহাজভাঙা শিল্প ও স্টিল রি-রোলিং মিলে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের অবস্থান সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেখানে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে।
ওই ঘটনায় রাত পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন অন্তত ২০ জন।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে 'সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট' গড়ে তোলা হয়েছিল, সেখানে সরু সড়কের দুই পাশে ৮-১০টি স্টিল রি-রোলিং মিল, তেলের রিফাইনারিসহ বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানার পাশাপাশি বসতবাড়িও ছিল।
ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর এলাকাটি রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের কারখানা, বসতবাড়ি। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। লোহার বেড়া আটকে রাখার অ্যাঙ্গেলগুলো পর্যন্ত বেঁকে গেছে।
প্ল্যান্ট প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সিলিন্ডার, লোহার টুকরো, ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যাওয়া তিনটি ট্রাক। কারখানা থেকে ৫০-৬০ গজ দূরে গিয়ে পড়ে রয়েছে লোহার টুকরো। শুধু তাই নয়, প্রায় ৫০০ গজ দূরে ছিটকে পড়া লোহার টুকরোর আঘাতে একজনের প্রাণহানিও হয়েছে।
তবে ভয়াবহ ওই ঘটনার পর কারখানার কর্তৃপক্ষের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজের দ্বিতীয় দিনে কারখানার ধ্বংসস্তুপ দেখতে আসেন সীমা গ্রুপের ব্যবস্থাপক ও কোম্পানির সুপারভাইজার।
ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি হামিদ মিয়া বলেন, “গত বছর বিএম ডিপোতে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়েছিল। এখানে বিস্ফোরণের কারণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।"
তবে সেখানে বিস্ফোরণ কেন ঘটল, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন।
রোববার সকালে ওই ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হবে, সেখানে জানানো হবে বিস্তারিত।”
আরও পড়ুন-
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কাজ দ্বিতীয় দিনে
ঘনবসতির মধ্যেই সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট; উবে গেল প্রাণ, রেখে গেল ধ্বংসচিহ্ন
হঠাৎ বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন জীবন, ‘যাব কোথায়’?
লোহার টুকরা ৫০০ গজ উড়ে গিয়ে প্রাণ কাড়ল শামসুলের
সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ৬, রাতে উদ্ধার কাজে বিরতি
সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ তদন্তে কমিটি, চিকিৎসা খরচ দেবে সরকার