নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণের অস্থায়ী শহীদ মিনার ও উত্তর কাট্টলীতে বানানো অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
Published : 26 Mar 2024, 02:37 PM
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতির বীর সন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে চট্টগ্রামবাসী।
মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বন্দরনগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহীদ মিনার ও উত্তর কাট্টলীতে বানানো অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ছাড়াও নানা পেশার মানুষও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বন্দর নগরীতে এবার স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি রাখা হয় দুটি ভিন্ন স্থানে। সকালে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে সিটি করপোরেশন। আর নগরীর মূল কেন্দ্র থেকে দূরে উত্তর কাট্টলীতে বানানো অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে কর্মসূচি রাখে জেলা প্রশাসন।
মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকলেও পর্যাপ্ত গবেষণা ও প্রচারের অভাবে জনগণের কাছে পৌঁছায়নি। শুধু নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করতে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের ডাকে বিশাল জনসভায় প্রথম জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচির ঐতিহাসিক ঘোষণা প্রদান করেন।
“কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। পাকিস্তানিদের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া অপারেশন জ্যাকপট, যার মাধ্যমে পাকিস্তানিদের তিনটি বড় অস্ত্রবাহী জাহাজ পানিতে তলিয়ে যায়, তাও পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। তবে, পর্যাপ্ত গবেষণা ও প্রচারের অভাবে চট্টগ্রামের এতসব ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অর্জন জনগণের কাছে সেভাবে পৌঁছায়নি।”
মেয়র বলেন, “তরুণদের প্রতি আমাদের অনুরোধ গবেষণা ও প্রচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের এই ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা জনতার কাছে ছড়িয়ে দিতে। যে চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সে চেতনাকে শাণিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে তরুণদের।”
মেয়রের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, কাউন্সিলর নেছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমাম হোসেন রানা, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন উপস্থিত ছিলেন।
মেয়রের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। এর আগে সোমবার গভীর রাতে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ।
জেলা প্রশাসনের কর্মসূচি
নগরীর মূল কেন্দ্র থেকে দূরে উত্তর কাট্টলীর সাগর তীরে তিন দিন আগে উদ্বোধন করা অস্থায়ী স্মৃতি সৌধে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার ভোরে সেখানে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শ্রদ্ধা জানান।
অস্থায়ী স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও শ্রদ্ধা জানান।
এরপর নগরীর কাজীর দেউড়িতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের অন্যান্য আয়োজন শুরু হয়। সেখানে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় ও জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ। কুচকাওয়াজে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস, আনসার ভিডিপি, কারারক্ষী এবং স্কাউটসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
এরপর শুরু হয় স্বাধীনতা দিবসের প্রদর্শনী। মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনীতে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
চট্টগ্রাম নগরীতে একটি শহীদ মিনার থাকলেও কোনো স্মৃতি সৌধ নেই। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় সেই পুরনো শহীদ মিনারটিও ভেঙে নতুন শহীদ মিনার করা হয়েছে। তবে নতুন শহীদ মিনারটি দৃশ্যমান নয় এবং আকারে ছোট বলে আপত্তি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকেই।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের সময় উত্তর কাট্টলীতে ৩০ একর জায়গায় নতুন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর এবার স্বাধীনতা দিবস ঘিরে সেখানেই আপাতত ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩০ ফুট প্রস্থের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।