জন্মদিনে আয়াতের জামা নিয়ে শোকাতুর মা-বাবা

প্রতিবেশী তরুণের ‘লোভের বলি’ হয়ে জন্মদিনের এক মাস আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় ছোট্ট আয়াত।

উত্তম সেন গুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2022, 04:30 AM
Updated : 14 Dec 2022, 04:30 AM

প্রতি বছর জন্মদিনের আগে আলিনা ইসলাম আয়াতের বায়না থাকে কেক কাটার আর বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার। মাস দুয়েক আগে থেকে সুন্দর জামা আর কেকের আবদার করা আয়াত এ বছর জন্মদিনের জন্য জামাও বাছাই করে রেখেছিল।

তুলে রাখা সেই জামা আর আগের বছরের জন্মদিনের স্মৃতি ঘিরেই এখন দিন কাটছে আয়াতের শোকাতুর বাবা-মায়ের।

প্রতিবেশী তরুণের ‘লোভের বলি’ হয়ে জন্মদিনের এক মাস আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় ছোট্ট আয়াত।

২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর আয়াতের জন্ম। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার, এবার বুধবার এল তার জন্মদিন।

আয়াতের মা সাহেদা আক্তার তামান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুঝতে শেখার পর থেকেই আয়াত তার জন্মদিনের আগে বিভিন্ন ধরনের বায়না ধরত। এ বছরও তার বায়না ছিল জন্মদিন পালনের। সেজন্য আমার বাবাকে বলেছিল কেকের টাকা পাঠাতে।

“কয়েক মাস আগে তার বাবা একটা সাদা জামা কিনেছিল। কিন্তু সেটা সে পরেনি, জন্মদিনে পরবে বলে। আয়াতকে জামাটা পরতে বলায় সে বলেছিল, পরলে জামাটা পুরানো হয়ে যাবে। জন্মদিনে ওই জামা পরে সে কেক কাটবে।”

আয়াতের বাবা সোহেল রানা জানান, এবার জন্মদিনের পর নানাবাড়ি যাওয়ার বায়না করেছিল আয়াত। সেখান থেকে ফুপুর বাড়িতেও যাওয়ার আবদার ছিল তার।

তিনি বলেন, “আমরা দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমি বড়। ছোট ভাই এখনও বিয়ে করেনি। বোনের কোনো সন্তান নেই। যার কারণে আয়াতই আমাদের পরিবারের সবার আদরের।

“আয়াত আমার কাছে যা আবদার করত, তার বেশি আবদার ছিল দাদার কাছে। আবার টেলিফোনে নানার কাছেও অবদার করত চকলেট, খেলনাসহ নানা জিনিস তাকে পাঠানোর জন্য।”

সোহেল রানা বলেন, “আমার শ্বশুর ওমান প্রবাসী। আয়াতের ৯ মাস বয়সে উনি চলে যান। কিন্তু প্রায় সময় মোবাইলে নাতনীর সাথে কথা বলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সে নানাকে বলেছিল চকলেট পাঠাতে আর কেক কিনে দিতে। 

“এবছর আয়াতের সবকিছুই আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে গেছে। আমাদের আয়াতকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে। আমরা তার হত্যাকারীর বিচার চাই।”

Also Read: শিশু আয়াতের দেহের খণ্ডিত অংশ পেয়েছে পুলিশ

Also Read: এবার মিললো আয়াতের ‘প্যাকেটে মোড়ানো মাথা’

Also Read: শিশু আয়াতকে খুনের ভয়ঙ্কর বর্ণনা পুলিশেরও ‘বিশ্বাস হচ্ছিল না’

Also Read: শিশু আয়াত হত্যা: আবীর ফের রিমান্ডে, আদালত চত্বরে উত্তেজনা

গত ১৪ নভেম্বর পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। তার দাদা নাতনির সন্ধান চেয়ে পিবিআইয়ের কাছে আবেদন করেন। পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিবেশী ১৯ বছর বয়েসী আবীর আলীকে আটক করে।

আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ি এলাকার সোহেল রানার মেয়ে। তাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকে আবীরের পরিবার। 

২৫ নভেম্বর পিবিআই জানিয়েছিল, ‘মুক্তিপণের’ জন্য শিশু আয়াতকে অপহরণ করে খুন করেন ১৯ বছরের আবীর। শিশুটিকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেন তিনি।

যার কিছু অংশ আকমল আলী রোডের স্লুইচ গেইটের একটি নালায়, আর কিছু অংশ সাগরে ফেলার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন আবীর।

এরপর আবীরকে নিয়ে পিবিআই সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি এবং আয়াতের জুতা উদ্ধার করে।

গত ৩০ নভেম্বর আউটার রিং রোডের আকমল আলী ঘাট সংলগ্ন স্লুইচ গেইটের এক গর্ত থেকে আয়াতের দুই পা এবং পরদিন খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই।

আয়াতের বাবা এরই মধ্যে নগরীর ইপিজেড থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।