শিশু আয়াত হত্যা: আবীর ফের রিমান্ডে, আদালত চত্বরে উত্তেজনা

আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজিত জনতা আবীরকে মারতে যায়, পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2022, 09:24 AM
Updated : 28 Nov 2022, 09:24 AM

চট্টগ্রামে পাঁচ বছরের শিশু আয়াতকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আবীর আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় সাত দিন রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আবদুল হালিম সোমবার শুনানি শেষে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

দুই দিন হেফাজতের পর এদিন আবীরকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)।

আদালতে বাদিপক্ষের আইনজীবী সেলিম উল্যাহ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন, তবে আবীরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

এর আগে শনিবার পিবিআইয়ের আবদনের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবীরকে দুদিনের জন্য পুলিশের হেফাজতে পাঠিয়েছিল আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মনোজ দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদে আবীর বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে, সেগুলো আমরা যাচাই করছি। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করেছিলাম।”

এদিকে আবীরকে এদিন আদালতে নেওয়ার খবরে আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত হন শখানেক মানুষ। আবীরকে দেখে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আয়াতকে হত্যার জন্য তারা আবীরকে লক্ষ্য করে চিৎকার করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মারতে‌ও যান।

শুনানি শেষে আবীরকে আদালত থেকে বের করার সময়ও মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সেলিম উল্যাহ চৌধুরী বলেন, “আদালত কক্ষে আনার সময় এবং শুনানি শেষে চলে যাওয়ার সময় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধরের চেষ্টা করেছিল। তবে আতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত থাকায় কিছু করতে পারেনি।”

উত্তেজনা থাকলেও ‘তেমন কিছু ঘটেনি’ মন্তব্য করে পরিদর্শক মনোজ দে বলেন, “মানুষের মধ্যে আবেগ আছে। তাই তাকে দেখে হয়ত উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। আমরা আমাদের মত করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।”

Also Read: শিশু আয়াতকে খুনের ভয়ঙ্কর বর্ণনা পুলিশেরও ‘বিশ্বাস হচ্ছিল না’

Also Read: শিশু আয়াত খুন: দিনভর অভিযানে মেলেনি ‘খণ্ডিত লাশের’ কোনো অংশ

Also Read: শিশু আয়াত খুন: আবীরের ২ দিনের রিমান্ড

আর চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষের মধ্যে শিশু হত্যার ঘটনাটি নিয়ে আবেগ আছে। তাই হয়ত রিঅ্যাকশন দেখিয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।”

গত ১৪ নভেম্বর পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। শিশুটির সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়।

তার দাদা পিবিআইয়ের কাছে আবেদন করেন নাতনির সন্ধান চেয়ে।পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৯ বছরের আবীরকে আটক করে।

আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ি এলাকার সোহেল রানার মেয়ে। তাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকে আবীরের পরিবার।

গত শুক্রবার পিবিআই জানিয়েছিল, ‘মুক্তিপণের’ জন্যই আয়াতকে অপহরণ করে খুন করেছে তাদের ভাড়াটিয়ার ১৯ বছরের ছেলে আবীর আলী। পরে ওইদিন রাতে আয়াতের বাবা নগরীর ইপিজেড থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

পিবিআই জানায়, ১৪ নভেম্বর বিকালে আরবি পড়তে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশে বের হয় আয়াত। বাসার গলিতেই আবীর তাকে কোলে নিয়েছিল, যা স্থানীয় শিশুরা দেখেছিল।

আশেপাশের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে এবং স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেশী আবীরকে আটক করা হয়।

পরে গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক বর্ণনা দেন আবীর। তার জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে শিশুটিকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে সে।

আবীর আলীকে নিয়ে শুক্রবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আলামত উদ্ধার করে পিবিআই। তবে সাগরের পানিতে ‘লাশ ভেসে যাওয়ায়’ শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা যায়নি।