আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দিয়ে যে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব, তা মনে করিয়ে দিলেন লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তিনি বলেছেন, “পৃথিবীতে বড় বড় কাজ বেশি টাকা দিয়ে হয় না। যদি বেশি টাকা দিয়ে কাজ হত, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা হত মধ্যপ্রাচ্যে। কারণ তাদের সবচেয়ে বেশি টাকা পয়সা।
“ফলে যে কোনো কাজের জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা ও ভালবাসা। আমি দেখছি, স্বপ্নবাগিচা মানুষের জন্য সে ভালবাসা বুকে ধারণ করতে পেরেছে। তারা অত্যন্ত সুন্দর করে একটি সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছে।’’
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রামে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে গড়ে ওঠা অবৈতনিক বিদ্যালয় ‘স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন’র উদ্যোগে দুই দিনের স্কুল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন জাফর ইকবাল।
নগরীর টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনি মাঠে উদ্বোধনী বক্তব্যে জাফর ইকবাল বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে গণিত অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডসহ অনেক প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত। এইসব জায়গায় শুধু ধনী পরিবারের সন্তানরা নয়, অনেক মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানরাও অংশ নিয়ে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়। তাই আমাদের কাজ হল সর্বদিক থেকে মেধাবীদের খুঁজে বের করা।”
সাবেক এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বলেন, “আমরা দেশের সব ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে সামনে এগিয়ে আনতে চাই। স্বপ্নবাগিচা তাদের মত আরো কিছু সংগঠনকে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই কাজটি করছে, যা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায় আলোয় আনতে সাহায্য করবে।”
চট্টগ্রাম বিভাগের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা স্কুল ও অন্যান্য সংগঠনকে সাথে নিয়ে এ উৎসব আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. শফিক হায়দার চৌধুরী।
উদ্বোধনী দিনে শুক্রবার সকালে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রীর পুনর্ব্যবহার নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এছাড়া আয়োজন করা হয় লোকনকশা কর্মশালা।
রাতে নৃত্য ও গান পরিবেশন করে বান্দরবানের ‘পাওমাং শিশু সদন’। আদিবাসী নৃত্য ও গান পরিবেশন করে খাগড়াছড়ির ‘পাঠশালা বিন্দু থেকে’।
স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদুল আলম বলেন, ২০১৯ সালে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ৩০ জন শিশুদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন। বর্তমানে রেলওয়ে কলোনি এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১৫০ জন শিশু এই বিদ্যালয় থেকে নিয়মিত পাঠ গ্রহণ করছে।
পাঠদানের পাশাপাশি সংগঠনের আয়োজনে আরো চালু হয়েছে স্বপ্নবাগিচা ছুটির দিনের পাঠশালা এবং স্বপ্নবাগিচা আরোগ্য নিকেতন। দরিদ্র এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত শিশুদের ধূসর ও মলিন জীবনে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসতেই দুইদিনের স্কুল উৎসব আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দুইদিনের আয়োজনে রয়েছে শিশুদের নিয়ে কর্মশালা, ছবি আঁকার মেলা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
শনিবার দ্বিতীয় দিনে উৎসবে অংশ নেবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।