চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমাবেশে মারামারি

সমাবেশে বক্তব্যে নেতারা শৃঙ্খলা বজায় রেখে অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 02:34 PM
Updated : 31 May 2023, 02:34 PM

চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মারামারিতে ইটের আঘাতে পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বুধবার বিকালে নগরীর জেলা পরিষদ চত্বরে সমাবেশ শুরুর সময় এ ঘটনা ঘটে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে নগরীর ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের জিএস ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য আরশাদুল আলম বাচ্চু এবং ওই কলেজের ভিপি ও পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।

শুরুতে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষে হাতাহাতি, পরে চেয়ার মারামারি ও সবশেষে ইট ছোড়াছুড়ি হয়। এসময় সমাবেশে বক্তৃতাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে আবার সমাবেশ শুরু হয়।

‘দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন ধারাবাহিকতা বানচালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দল’ এই ‘গণসমাবেশ’ আয়োজন করে। প্রায় পাঁচ বছর পর এটি চট্টগ্রামে ১৪ দলের কোনো কর্মসূচি।

কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৪ দলের সমাবেশে মিছিল নিয়ে অংশ নিতে আসছিল দলীয় নেতাকর্মীরা। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে এমইএস কলেজের ছাত্রনেতা আরশাদুল আলম বাচ্ছু এবং সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর গ্রুপের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়।

“এক পর্যায়ে দুই পক্ষই ইট-পাটকেল ছুড়লে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিনের মাথায় লাগে। এতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলেও সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”

জানতে চাইলে চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমন্বয়ক, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গণসমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে। অতিরিক্ত গরম ছিল। সবাই বসার সুযোগ পায়নি। এসময় ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।

“লোকজন বেশি থাকায় ছেলেরা বুঝতে পারেনি কী হয়েছে। বিএনপি-জামাতের কর্মীরা গণসমাবেশে আক্রমণ করেছে মনে করে ছেলেরা ইট মারতে শুরু করে। এসময় বিশৃঙ্খলা হয়ে যায়। ছেলেদের শান্ত করতে গেলে কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিনের মাথায় ইট পড়ে।”

এসময় মোট চার-পাঁচজন আহত হন বলে জানান তিনি। এর মধ্যে কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন নগরীর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। আহত অন্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

মারামারির বিষয়ে জানতে ওয়াসিম উদ্দিন ও আরশাদুল আলম বাচ্চুর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

‘অপশক্তি রুখতে হবে, শৃঙ্খলা রাখতে হবে’

সমাবেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা।

সমাবেশের সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, “কোনো পরাশক্তির নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ পরাভব মানেনি, মানবে না।

“১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যখন নজিরবিহীন গণহত্যা চলেছিল, তাকে মদদ দিয়েছিল যে দেশটি এবং ১৯৭৪ সালে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির নীলনকশাকারী সেই দেশটিকে আমরা চিনি ও জানি। ওই দেশটিতে এখন অর্থনৈতিক খরা চলছে। আমাদের দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি ও অর্থনীতি কী রকম হবে, তা নিয়ে তাদের কোনো প্রেসক্রিপশনের দরকার নেই।”

জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব রাজনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনকে এক হয়ে থাকার আহ্বান জানান সুজন।

“আমাদের ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সামষ্টিক স্বার্থের কথা ভাবতে হবে। আমাদের ভাবনার মূল কাণ্ডারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪ দল জাগ্রত হয়েছে।”

সমাবেশের প্রধান বক্তা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “একটি যুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর প্রয়োজন। একটি দলের আদর্শ-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী। এই সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী দলের শক্তি ও ঐক্যের ভিত্তি। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করি, আমাদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপশক্তিকে বিনাশ করা।”

সমাবেশে জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমুদ্দিন বাবুল বলেন, “বিএনপি-জামাত জোট সরকার একটি কুখ্যাত কালোবাজারি ও সন্ত্রাসী লুৎফুর রহমান বাবরকে দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলে। তারই নেতৃত্বে এদেশে অনাচার ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টাও হয়েছে। একারণে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি যদি আবার ক্ষমতায় না আসে এদেশ পাকিস্তান হয়ে যেতে পারে।”

চট্টগ্রাম জেলা ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি আবু হানিফ বলেন, “আমরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতায় একই মঞ্চে সমবেত হয়েছি। এই জোট কোন নির্বাচনমুখী জোট নয়। এই জোট স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতে একটি মুক্তমঞ্চ।”

ওয়ার্কাস পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান এবং চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সাম্যবাদী দলের অমূল্য বড়ুয়া, গণ আজাদী লীগের নজরুল ইসলাম আশরাফি, ন্যাপ মোজাফ্ফরের ফয়েজ উল্লাহ মজুমদার, গণআজাদী লীগের খোরশেদ আলম, জেপি’র ডা. বেলাল মৃধা, গণতন্ত্রী পার্টির স্বপন সেন, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, নীলু নাগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ।

উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান ও চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মসিউর রহমান চৌধুরী, ন্যাপ এর মো. আলমগীর চৌধুরী, জাসদের বেলায়েত হোসেন, ওয়ার্কাস পার্টির মনসুর মাসুদ, নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য বখতেয়ার উদ্দীন খান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার প্রমুখ।