“চট্টগ্রামে অনেক সরকারি ভবন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, এ ভবনগুলোতেও যাতে ডেঙ্গুর প্রজননক্ষেত্র না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে," বলেন মেয়র।
Published : 27 Jul 2023, 11:54 PM
চট্টগ্রাম নগরীর নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে সবচেয়ে বেশি এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) সাধারণ সভায় তিনি এ কথা জানান।
মেয়র বলেন, "ডেঙ্গুর উৎস সন্ধানে পরিচালিত অভিযানে নির্মানাধীন ভবনে সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামে অনেক সরকারি ভবন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, এ ভবনগুলোতেও যাতে ডেঙ্গুর প্রজননক্ষেত্র না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।"
সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালাচ্ছে মন্তব্য করে মেয়র রেজাউল বলেন, "বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে করোনাকালের মত সিটি করপোরেশন পরিচালিত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক বিশেষায়িত কেন্দ্র চালু করা হবে।
“অনেকে ড্রোন ব্যবহারের সমালোচনা করছেন। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। ড্রোনের কারণে বহুতল ভবনে মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করা যাচ্ছে অনেক দ্রুত। সুইমিং পুল, ছাদ বাগান, বারান্দায় টবে জমে থাকা পানি মশার প্রজনন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। জনসাধারণের সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”
এদিকে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভার পর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে 'ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির' প্রথম সভা হয়।
ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও ডেঙ্গুর চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মেয়র রেজাউল গত ১১ জুলাই সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে সভা করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করেন।
সভায় সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, ৫ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১২৭টি মামলায় ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে সিটি করপোরেশন।
"ড্রোন ব্যবহার করে যেখানে পানি জমে আছে এবং লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে জরিমানা করা হচ্ছে। পানি জমে থাকলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।"
সভায় মেয়র রেজাউল বলেন, "মশা নিধনে নিয়োজিত স্প্রেম্যানের সংখ্যা ২২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ৩০০টি স্প্রে মেশিন ও ১২০টি ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণে।
“বর্তমানে ১০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড, ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও ৫,০০০ লিটার ন্যাপথা মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাদলের সুপারিশের আলোকে মসকুবান নামের ভেষজ ওষধ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। অ্যাডাল্টিসাইড হিসেবে ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড, লার্ভিসাইড হিসেবে টেমিফস ৫০ ইসি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ এলডিও এবং এইচএসডি (কালো তৈল) ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।"
এইডিস মশা নিধনে বিটিআই ও নেভোলিউবন ওষুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও জানান মেয়র রেজাউল।
ডেঙ্গুর প্রকোপ না কমা পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন পর পর সভা করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকল সংস্থাকে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান সভায় বলেন, "জ্বর দেখা দিলে ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ডেঙ্গু আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না।”
"জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে মশার জীবনপদ্ধতি বদলে যাচ্ছে, তাই মশা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।"
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী চট্টগ্রামের সবগুলো স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর আহ্বান জানান।
সিটির প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, সিভিল সার্জনের কাছ থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে রোগীর কর্মস্থল ও বসবাসস্থলের আশেপাশে বিশেষ মশা নিধন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, জহর লাল হাজারী, মো. মোবারক আলী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ডেঙ্গু মশার উৎসস্থল ধ্বংস করার লক্ষে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজালা রানী চাকমা।
অভিযানে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে, ফুলের টব, ড্রাম ও ছাদে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা থাকায় চারটি ভবনের মালিকের কাছ থেকে মোট ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।