চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে উচ্ছেদ অভিযান

ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা বলছেন, যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে সেগুলো চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2023, 02:17 PM
Updated : 19 March 2023, 02:17 PM

চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামের অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযানে নেমে কয়েকটি নার্সারি, রেঁস্তোরাসহ কিছু দোকান ভেঙে দিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা মংয়ের নেতৃত্বে রোববার সকালে এ অভিযান চালানো হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে সেগুলো চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) জায়গা আউটার স্টেডিয়ামে গড়ে তোলা হয়েছে।

“প্রধানমন্ত্রীর খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক এ জায়গা পরিদর্শন করেছিলেন। লাল দাগ দিয়ে মাঠের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি যারা স্থাপনা তৈরি করেছিলেন তাদের উঠে যাবার সময় দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা দখল না ছাড়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।”

অভিযানের সময় এমএ হোসাইন বাদল নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, ‘সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের’ আওতায় সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নিয়ে তিনি এসব স্থাপনা তৈরি করেছিলেন। তিনি উচ্ছেদে আদালতের স্থিতাবস্থা জারির কাগজপত্র দেখাতে চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট সার্টিফায়েড কপি না থাকার কারণ দেখিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখেন।

বাদল বলেন, আউটার স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব পাশের ফুটপাত তিনি সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় ই-টেন্ডারের মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন ২০১৮ সালের শেষ দিকে। সেখানে ফুড জোন, পাবলিক টয়লেট, যাত্রী ছাউনি, ট্রাফিক পুলিশ বক্স, নার্সারি তৈরি করেছিলেন, যার জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যয় করা অর্থ ফুড জোন থেকে আয় করতে বলা হয়েছিল।

তার অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার ও জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ায়ের মাপের মধ্যে ভিন্নতা আছে। ফুড জোন ও নার্সারি উচ্ছেদ করা হলেও ট্রাফিক পুলিশ বক্সটি উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। তিনি ‘ষড়যন্ত্রের’ শিকার হয়েছেন।

গত ১৬ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে স্থিতাবস্থা জারির আদেশ পাওয়ার দাবি করে বাদল বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থাও ওইদিন ৩১ মার্চের মধ্যে স্থাপনা ছাড়ার নোটিস দিয়েছিল তাকে। কিন্তু তার আগেই উচ্ছেদ করা হল।

“আ জ ম নাছির উদ্দিন জেলা সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি সিটি মেয়র ছিলেন। তার সময়ে আমি এটি ইজারা নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বলছে এটা জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গা। আমরাতো মাঠে কোন স্থাপনা নির্মাণ করিনি। এ স্থাপনা ফুটপাত ও নালার ওপরে করা হয়েছে করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে।”

এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ আব্দুল্লাহ আল ওমরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সাবেক সিটি মেয়র ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, “ফুটপাতের সৌন্দর্য্য বর্ধনের আওতায় তারা এটা নিয়েছিল। কিন্তু জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গায় তো তারা আসতে পারবে না। সমস্যা হচ্ছে তারা জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গায় চলে আসছে।”

গত ১৬ মার্চ স্থাপনা তৈরি করা প্রতিষ্ঠানকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে সরে যাওয়ার চিঠির প্রসঙ্গে আ জ ম নাছির বলেন, “আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে নোটিস দিয়েছি এত তারিখের মধ্যে। এমন না যে ওই দিন….। আমি ও জেলা প্রশাসক যখন গিয়েছিলাম তখনতো তাদের দুই সপ্তাহর সময় দিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসনতো আরও আগে উচ্ছেদের জন্য নোর্টিশ দিয়েছিল। মার্চের ২ তারিখের হিসেবেতো ১৪ দিন হয়ে গেছে।”

গত ২ মার্চ আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সাথে নিয়ে আউটার স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে সংস্কারের কথা জানান জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

ওই দিন জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এক জন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে সার্ভেয়ার দিয়ে আউটার স্টেডিয়ামের মাপ নিয়ে তা লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে মাঠের জায়গায় দুটি রেস্তোরাসহ কিছু স্থাপনা আছে।

“যেহেতু অনুমতি নিয়েই রেস্টুরেন্টসহ স্থাপনাগুলো করা হয়েছে, সেহেতু তাদের একটা ইনভেস্টমেন্টের বিষয় আছে। তাই সেগুলো সড়িয়ে নেয়ার জন্য তাদের দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে। তারপর মাঠে চারপাশে সীমানা পিলার দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।”