দুই বছরের বেশি সময় পর জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন হেফাজত ইসলামের নেতা হারুন ইজহার; যিনি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের তাণ্ডবের 'মদদদাতা' হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
সোমবার রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ডেপুটি জেলার মো. ইব্রাহীম।
কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজত ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহারের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা ছিল; যেগুলোর প্রতিটিতে তার জামিন হয়েছে।
২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ঘিরে দেশের বিভিন্নস্থানে যে নাশকতা হয়েছে, তাতে প্রত্যক্ষভাবে মদদ দেওয়ার অভিযোগে ওই বছরের ২৮ এপ্রিল রাতে তাকে চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব।
হারুন ইজহার বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর বড় ছেলে এবং চট্টগ্রামের লালখান বাজারের জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক।
হারুনের বাবা মুফতি ইজহার চট্টগ্রামের ওই মাদ্রাসার পরিচালক; যিনি এক সময় হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ছিলেন ।
২০০৯ সালের নভেম্বরে ওই মাদ্রাসার পেছনের পাহাড় থেকে লস্কর ই তৈয়বার সন্দেহভাজন দুই বিদেশি জঙ্গিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হারুন।
ঢাকায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
পরে ২০১৩ সালে ওই মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে বড় ধরনের বিস্ফোরণে দুইজনের মৃত্যু হয়। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাজা গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় খুলশী থানায় বিস্ফোরক ও এসিড আইনে দুটি মামলা হয়, যাতে মুফতি ইজহার ও তার ছেলের হারুনকে আসামি করা হয়।
ওই ঘটনায় চট্টগ্রামে বিস্ফোরক ও এসিড আইনে দুটি মামলা হয়, যাতে মুফতি ইজহার ও তার ছেলে হারুনকে আসামি করা হয়। পরে হারুনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।
এরপর ২০২১ সালে সুবর্নজয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় বিক্ষোভের সময় হাটহাজারী থানায় আক্রমণ করে ভাংচুর চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। পাশাপাশি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা সদর ভূমি অফিসে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সেদিন চারজন নিহত হন।
সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও ব্যাপক তাণ্ডব চালায় মাদ্রাসার ছাত্ররা। এসব ঘটনায় পরে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়, নাশকতায় উসকানিদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজত ইসলামের বিভিন্ন স্তরের কয়েক ডজন নেতাকে।
হাটহাজারীর ঘটনায় ৩০ মার্চ রাতে পুলিশ বাদী হয়ে চারটি এবং ভূমি অফিসে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়। কারও নাম উল্লেখ না করে এসব মামলায় আসামি করা হয় কয়েক হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে।
ওই সংঘর্ষের ঘটনার প্রায় এক মাস পর ২২ এপ্রিল হেফাজত ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এবং বিএনপি নেতা মীর হেলালকে আসামি করে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল হাটহাজারীতে।